মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

"আমার মনে হয় এই দুনিয়ার সব মেয়েই খারাপ"

আমার বাসা কল্যানপুর না হলেও এই এলাকাটা আমার কাছে খুবই প্রিয়। আমার কিছু বাল্য বন্ধু কল্যানপুর থাকে স্থায়ীভাবে তাই প্রায় প্রতিদিনই ওখানে যেতাম আড্ডা দিতে। এখন অবশ্য নানা ব্যস্ততার কারনে খুব একটা যাওয়া হয়না। যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের আড্ডার স্পট ছিল রিফাতের বাসার ছাদ। প্রতিদিন বিকেলেই তুমুল একটা আড্ডা হত ওদের বাসার ছাদে। আপনাদের হয়ত মনে হতে পারে এত জায়গা থাকতে ছাদ কেন? আসলে রিফাতদের আশেপাশের বিল্ডিংগুলাতে অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ছিল। বিকেলে ওরাও নিজ নিজ বাসার ছাদে উঠত। আমরা আড্ডার পাশাপাশি একটু আধটু টাঙ্কিও মারতাম আর কি!!;);)

ছাদে যেসব সুন্দরীরা উঠত বেশিরভাগই ছিল আমাদের সমবয়সী। এই ধরেন নাইন/টেন-এ পড়ে এমন আরকি! তো বলে রাখা ভালো, আমাদের কিন্তু আবার টাঙ্কি পার্টনার নির্ধারিত ছিল। নিজের টাঙ্কি পার্টনার ছাড়া অন্য কারো পার্টনারের দিকে তাকালে গণধোলাইয়ের ব্যবস্থা ছিল। মাঝে মাঝে অবশ্য সমঝোতার ভিত্তিতে পার্টনার চেঞ্জ করারও বিধান ছিল। আসলে আমরা চেয়েছিলাম আমাদের টাঙ্কিবাজীর মধ্যে যাতে একটা সুশৃংখলতা বজায় থাকে। তাই এত বিধান সিধান!!
;):D

আমাদের সবার মধ্যে একমাত্র তুর্য ছিল ব্যাতীক্রম। সে টাঙ্কি মারত খুবই সুইট পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে। এতই পিচ্চি যে ঐ মেয়ের টাঙ্কি কি জিনিস সেটা বোঝার বয়সও তখন হয়নি। তুর্য একটা কথা সবসময় আমাদের বলত, “এইটা বড় হইলে একটা মাল হইবরে দোস্ত। দেখিস এই মাইয়া বড় হইলে আমি ওর লগেই প্রেম করমু”। তুর্যকে নিয়ে কত হাসি-তামাশা যে আমরা করতাম তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাঝে মাঝে ওরে বেবী-টিজার আখ্যায়িত করে হেভী গণধোলাই দিতাম।
:)

মেয়েরা যে কত দ্রুত বড় হয়ে যায় লিন্ডাকে(সেই পিচ্চি মেয়ে) দেখেই তা ভালোমত বুঝতে পারলাম। সেদিনের পিচ্চি লিন্ডা মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কিভাবে এমন পরিপুর্ণ যুবতী হয়ে উঠল সেই হিসেবই আমরা মিলাতে পারছিলাম না। তুর্য ঠিকই অনুমান করেছিল, লিন্ডা সেইরকম একটা মাল হইছে। লিন্ডার শরীরের গঠন যে কতটা আকর্ষনীয় ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। তাছাড়া মেয়েটা এমন সেক্সি সেক্সি পোশাক পড়ে চলাফেরা করত যে শরীরের প্রতিটা ভাজই স্পষ্ট বোঝা যেত। যাই হোক লিন্ডা একসময় এলাকার সবচেয়ে হট গার্লের খেতাব পেয়ে গেল।


এদিকে আমাদের তুর্য মশাই কিন্তু কখনোই লিন্ডার পিছু ছাড়ে নাই। লিন্ডাকে পটানোর অনেক চেষ্টাই সে করে গেছে কিন্তু লিন্ডা তুর্যকে মোটেও পাত্তা দিতনা। হেন কোন অপমান নাই যে লিন্ডা তুর্যকে করতে বাকি রেখেছে। তারপরও তুর্য আশাহত হয়নি। তুর্যের বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন লিন্ডা তারই হবে।


এরমধ্যে আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধুদেরই একজন রকি, লিন্ডাদের বিল্ডিং-এ ফ্ল্যাট ভাড়া নিল। আগে থেকে চেনা পরিচিত এবং বর্তমানে প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে লিন্ডা ও রকির মধ্যে একটা বন্ধুত্তপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠল। এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ত অবশ্য তুর্য সহজভাবে নিতে পারেনি। তুর্যের আশংকা ছিল লিন্ডা-রকির সম্পর্ক ধীরে ধীরে প্রেমের দিকে টার্ন নিবে। আমরা কোনোকালেই তুর্যের কথা সিরিয়াসলি নিতাম না। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তুর্যের কথাই অবশেষে ফলে যেত।


রকি ও লিন্ডার একসময় প্রেম হল। কিন্তু অতি কাছের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও রকি এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে গোপন রেখেছিল। একদিন তুর্য সব বন্ধুর উপস্থিতিতে রকিকে চার্জ করল। তুর্য স্পষ্টভাবে রকির কাছে জানতে চাইল তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক চলছে। রকি প্রথম প্রথম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলেও একসময় সত্যি কথা স্বীকার করতে বাধ্য হল। তুর্য প্রচন্ড রেগে গিয়ে রকির কলার চেপে ধরে বলল, “তুই কি জানতি না আমি যে লিন্ডাকে পছন্দ করি”? রকি উল্টা তুর্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল, “তুই পছন্দ করিস বলে কি লিন্ডা তোর সম্পত্তি হয়ে গেল নাকি? লিন্ডা তো তোকে পছন্দ করেনা। লিন্ডা পছন্দ করে আমাকে। তুই একটা লুজার। যা ফুট!!!”


সেদিন পরিস্থিতি বেশ ভয়ংকর আকার ধারন করতে পারত। কিন্তু আমরা বাকি বন্ধুরা অতি কষ্টে ওদের দুজনকে সামাল দিয়েছিলাম। তুর্যকে আমি বুঝিয়ে বললাম, “দোস্ত, তুই তো কম চেষ্টা করিস নাই। অনেক অপমানিত হইছিস লিন্ডার কাছে। লিন্ডা আসলে তোর জন্য না। তুই ভুলে যা ওরে”। আমার কথা শুনে তুর্য কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর হুরমুর করে কেঁদে উঠল। ঐদিন তুর্যকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তুর্যের কান্না দেখে আমাদের চোখেও পানি এসে পড়েছিল।


এদিকে আমাদের রকি মশাই লিন্ডার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই বেশ বদলে গিয়েছিলেন। আড্ডার সময় সবাই উপস্থিত থাকলেও রকিকে খুজে পাওয়া যেত না। আর পাওয়া যাবেই বা কিভাবে? রকির ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা সবকিছুই তো লিন্ডা দখল করে বসে আছে। রকি পড়ত একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। ওদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিলনা। কিন্তু লিন্ডার মন রক্ষার জন্য সাধ্যমত প্রচুর টাকা খরচ করত। এই টাকা সে যোগাড় করত সেমিস্টারের ফি-এর টাকা মেরে। তাছাড়া না খেয়ে, পায়ে হেটে অতি কষ্টে সে টাকা জমাতো শুধুমাত্র লিন্ডাকে গিফট কিনে দেয়ার জন্য বা দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর জন্য।


একটা সময় লিন্ডা আর রকির সম্পর্ক লিন্ডার ফ্যামিলি জেনে ফেলে। লিন্ডার বাবা লিন্ডাকে বেশ মারধর করল এবং লিন্ডার একা বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেদাজ্ঞা জারি করল। রকির বাসায় গিয়েও রকির বাবা-মাকে নালিশ করেন এই ব্যাপারে।


এদিকে আমাদের ইউসুফ-জুলেখা আই মিন রকি-লিন্ডা ভিতরে ভিতরে প্ল্যান করে ফেলেছেন তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবেন। যথারীতি তারা ঘর থেকে পালালেন। ঢাকার একটা আবাসিক হোটেলে বাসর রাতও উদযাপন করে ফেললেন। বিয়ে কিন্তু তখনো হয়নি। বিয়ে হবে পরদিন সকালে। জানেনই তো, আজকালকার যুগে বিয়ের আগেই অনেকবার বাসর রাত উদযাপন করা হয়ে যায়।


একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। লিন্ডার বাবা আবার বেশ প্রভাবশালী এবং অত্যন্ত ধুর্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি পরদিন ভোরেই পুলিশের সহায়তায় দুই কোপত-কোপতীকে উদ্ধার করলেন হোটেল কক্ষ থেকে। রকিকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেন তার মেয়েকে কিডন্যাপিং-এর অভিযোগে। অবশ্য রকির বাবা-মা খুব শীঘ্রই রকিকে ছাড়িয়ে এনেছিল জেলহাজত থেকে।


রকি-লিন্ডার কাহিনী টক অব দ্যা এরিয়া হয়ে গেল। সবার মুখে মুখে তখন শুধু ওদেরই কথা। লিন্ডার বাবা লিন্ডাকে পুরোপুরি তালাবদ্ধ করলেন। এদিকে জেল খাইটা আইসা রকিও বেশ ডেস্পারেট হয়ে গেল। লিন্ডার বাবাকে ওপেন থ্রেট করল, “আপনি কতদিন লিন্ডাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন আমি দেখে নিব”।



চিঠিটা পড়ে রকি বাকশুন্য হয়ে পড়ল। আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। যেই তুর্যের আজকে খুশি হওয়ার কথা সেই তুর্য পর্যন্ত রকির এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মারাত্নক উত্তেজিত হয়ে পড়ল। আমরা ঠিক করলাম লিন্ডার বাসায় গিয়ে ওকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে রকির মুখোমুখি করব। তাছাড়া ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিত। কথা নাই বার্তা নাই সে কেনো রকিকে এভাবে অপমান করবে? কিন্তু রকি আমাদের বাধা দিয়ে বলল, “দোস্ত, ওর সাথে যা কথা বলার আমি বলব। তোদের কিছু করার দরকার নাই”। রকি অনেক চেষ্টা করছিল একটা বারের জন্য লিন্ডার সাথে কথা বলার কিন্তু লিন্ডা সেই সুযোগ রকিকে দেই নি।


এক সপ্তাহ পর সত্যি সত্যি লিন্ডার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের সম্পুর্ন আয়োজন অবশ্য অন্য একটি স্থানে সম্পন্ন হয়েছিল। যেই ছেলের সাথে লিন্ডার বিয়ে হয়েছে সেই ছেলে নাকি লিন্ডাদের আত্নীয়। লিন্ডা-রকির ঘটনাটা সে জানত এবং সবকিছু জেনেশুনেই বিয়ে করছে। লিন্ডা স্বামীর সাথে বেশ সুখেই আছে। মাঝে মাঝে স্বামী সমেত বাপের বাড়ী বেড়াতে আসে। স্বামীর সাথে ঢেলাঢেলী করতে করতে আর হাসতে হাসতে আমাদের সামনে দিয়ে যায়। আমরা তখন মনের দুঃখে গেয়ে উঠি, রকির বাড়ির সামনে দিয়া লিন্ডা যখন জামাই লইয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়, ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়। লিন্ডার বিয়ের পর থেকে রকি পুরোপুরি ঘরকুনো হয়ে গেছে। কখনোই আড্ডা দিতে আসে না। জোর করেও আনতে পারিনা। অথচ একসময় রকিকে ছাড়া আড্ডা জমতই না। আড্ডার প্রান ছিল রকি।


রকি এবং আমরা বাকি বন্ধুরা এখন পর্যন্ত একটা ব্যাপার সিওর হতে পারলাম না যে আসলে কেন লিন্ডা এরকম করল। “লিন্ডা কি আসলেই রকিকে ভালোবাসত? আর যদি ভালো নাই বেসে থাকে তাহলে কেন রকির সাথে পালিয়ে গিয়েছিল?রকির আর্থিক অবস্থা তো লিন্ডা আগে থেকেই জানত। সবকিছু জেনেশুনেই সে রকির সাথে রিলেশন করেছে। তারপরও কেন তাকে ফকির বলে গালাগালি করল? লিন্ডার বাবার কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না তো?” কারন নিশ্চয়ই কিছু একটা ছিল। হয়ত রকি বা আমরা কোনোদিন তা জানবনা।


কিছুদিন আগে রকির সাথে দেখা হইছিল। ওকে বললাম, “দোস্ত যা হইছে সব ভুইলা যা। আবার নতুন করে শুরু কর। নতুন কারো সাথে রিলেশন কর”। রকি অতি কষ্টে ঠোটের এক কোনায় হাসি এনে বলল, “দোস্ত আমি আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয় এই দুনিয়ার সব মেয়েই খারাপ”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন