রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

রহস্যময়ী!

প্রাইভেট টিউশনী একটা বিরক্তিকর পেশা। যারা এই পেশার সাথে জড়িত আছেন তারা হয়ত আমার সাথে একমত হবেন। বন্ধুবান্ধবের সাথে শান্তিমত আড্ডা দিচ্ছেন...হঠাৎ মনে হল একটু পরেই তো টিউশনীতে যেতে হবে। পেইনফুল একটা ব্যাপার কিন্তু কি আর করা? যেতে তো হবেই! একটা বয়সে বাবা-মার কাছে টাকা চাওয়াটাও আত্নমর্যাদা হানিকর একটা ব্যাপার। আর হাবিজাবি খরচের কি শেষ আছে? গার্ল ফ্রেন্ডের খরচ, মোবাইলের খরচ, চা-বিড়ির খরচ, হেন খরচ-তেন খরচ...বাবা-মার কাছে কত আর চাওয়া যায়? এসব কারনে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে-পেলের জন্য টিউশনী অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। বিরক্তিকর হলেও টিউশনীই তাদের জন্য এই টাইপের খরচ মেটানোর একমাত্র উপায় একথা বলাই বাহুল্য। যাই হোক এসব প্যাঁচাল না পেড়ে আসল কথা বলি। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর পরই আমি বেশ ভালো একটা টিউশনী পাই। আমার ছাত্র পড়ত ক্লাস সেভেন-এ। সেইরকম জিনিয়াস ছিল ছেলেটা। পড়িয়ে জোস মজা পেতাম। বান্দার সমস্যা একটাই--তা হল বয়সের তুলনায় একটু বেশী পাঁকনামী করত। কথাবার্তা শুনলে মনে হত কলেজে পড়ে। পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে পাঁকা পাঁকা কথা বললেও অনেক সময় হজম করতাম। তাছাড়া আমি কখনোই টিচার সুলভ গম্ভীর আচরন করে অভ্যস্ত না। তাই হয়ত ছাত্রটাও আমার সাথে কথা বলে মজা পেত। তো একদিন এইকথা সেইকথার ফাঁকে হঠাৎ বলল, “স্যার আপনাকে একটা কথা বললে রাগ করবেন না তো?” আমি ভ্রু কুঁচকে গম্ভীরস্বরে বললাম, “যদি সত্যিই রাগ করার মত কোনো কথা হয়ে থাকে তাহলে বলার দরকার নাই”। আমার কাছ থেকে এরকম কঁড়া জবাব হয়ত আমার ছাত্র কখনো আশা করেনি। বেলুনের মত চুঁপসে গেল একেবারে। বেচারার বিমর্ষ চেহারা দেখে আমার খুব মায়া লাগল। তাছাড়া আমি বোধ হয় ওকে একটু বেশীই আদর করতাম। একটা সময় হাসিমুখে বললাম, “আচ্ছা যা বলার তাড়াতাড়ি বল”। অনুমতি পেয়ে ছাত্র তো বেজায় খুশী...।
--“স্যার আপনার ফোন নম্বরটা একজন খুব চাচ্ছে। আপনি পারমিশন দিলে আপনার নম্বরটা উনাকে দিতাম”।
--“আমার নম্বর তোমার কাছে কে চাচ্ছে? আর কেনই বা চাচ্ছে”?
--“আমার পরিচিত এক আপু আছে। আমাদের এলাকাতেই থাকে। খুব ভালো সম্পর্ক আমার সাথে। উনি নাকি আপনাকে খুব পছন্দ করে। সবসময়ই আপনার কথা জিজ্ঞেস করে। কদিন ধরে খুব করে বলছে আপনার ফোন নম্বরটা দেয়ার জন্য। আমি অবশ্য বলছি, আপনি পারমিশন না দিলে কখনো দিব না”।
--“তোমার আপু তো মানুষ সুবিধার না! এতটুকু একটা বাচ্চাকে মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করতেছে! এনিওয়ে আমার নম্বরটা তুমি তাকে দিও। এরকম মানুষকে দুটা কথা শোনানোর দরকার আছে”!!
আমার হম্পি-দম্পি শুনে আমার ছাত্র একটা মুঁচকি হাসি দিল। আমি যে ভিতরে ভিতরে বেজায় খুশী সেটা কি সে বুঝে ফেলেছিল নাকি? বুঝলেও বুঝতে পারে...যেই পাঁকনার পাঁকনা!! :D :P

সেদিনই রাত ১২টার দিকে আননন নম্বর থেকে একটা ফোন আসল। আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম এই ফোন কার হতে পারে। ভাব নেয়ার জন্য গম্ভীরভাবে বললাম, “হ্যালো”। উত্তরে মেয়েটা যখন বলল, “হ্যালো নিবিড়(আমার আসল নাম ব্যবহার করলাম না) বলছেন?” মেয়েটার কন্ঠ শোনার পর আমার গাম্ভীর্য যে কোথায় উবে গেল টেরও পেলাম না। আমিও যথেষ্ট নরম সুরে বললাম,
--“জ্বী বলছি। আপনি কে বলছেন প্লিজ”?
--“বলতে ভয় লাগছে। আমি আবার মানুষ খুব একটা সুবিধার না তো”!
--“হাহাহাহা! ও আচ্ছা আপনি”?
--“আমাকে নাকি আপনি কিছু কথা শোনাবেন? আমি কিন্তু শোনার জন্য রেডী আছি”।
--“না মানে...ইয়ে...এতটুকু একটা বাচ্চাকে বোধ হয় এই কাজে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি।
--“হুম হয়ত বা। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। ও ছাড়া আপনার নম্বরটা ম্যানেজ করার আর কোন উপায় কি ছিল বলুন”?
--“ঠিক আছে বুঝলাম। এখন বলুন আমার নম্বরের জন্য আপনি এত ব্যাস্ত হয়ে উঠেছিলেন কেন”?
--“বলতে লজ্জা লাগছে কিন্তু তাও খোলাখুলিভাবেই বলি...আপনাকে আমার খুবই ভালো লাগে। অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে করছিল আপনার সাথে একটু কথা বলতে। আচ্ছা আমি যদি মাঝে মাঝে ফোনে আপনার সাথে কথা বলতে চাই...খুব কি বিরক্ত হবেন”?
--“না না বিরক্ত কেন হবো? আপনার সাথে কথা বলতে বরং আমার ভালোই লাগবে। তাছাড়া আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন”।
--“অনেক অনেক থ্যাংক্স। আজকে রাখি তাহলে”?
--“আরে শুনুন...আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানা হল না। নামটা অন্তত বলুন...”
--“নিশিকা”।

সেদিন রাতে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা অনুভূত হচ্ছিল। মাঝে মাঝে পৃথিবীটাকে এত সুন্দর মনে হয় কেন, কে জানে? কিছুতেই ঘুম আসছিল না। একটা সময় বিছানা থেকে উঠে কম্পিউটারের সামনে বসলাম। আমার খুব প্রিয় একটা রবীন্দ্রসংগীত...“আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি” আনমনে শুনতে লাগলাম। মেয়েটার প্রতি তীব্র একটা আকর্ষন অনুভব করছিলাম। খুব ইচ্ছে করছিল নিজেই একবার ফোন দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলি। যদিও সে রাতে আর ফোন দেয়া হয়নি।

পরদিন গেলাম ছাত্রের বাসায়। আমার পোংটা ছাত্র একটু পরপরই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মুঁচকি মুঁচকি হাসছে। ইচ্ছা করছিল কান দুটা জোরছে মলা দেই। আজকালকার পোলাপান এত পাঁকনা হইছে...!!
--“স্যার, আপুর সাথে কি কথা হইছিল”?
--“তোমার এত কিছু জানার দরকার নাই। অংক করো ঠিকমত”!
--“স্যার লাস্ট একটা কথা বলি? এরপর একদম চুপ...আর একটা কথাও বলব না”।
--“আচ্ছা বল”।
--“আপু কিন্তু দেখতে ভয়াবহ সুন্দরী। আপনি দেখলে নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবেন”।
কথাটা বলে সে ফেকফেক করে হাসতে লাগল। ঐদিন কান ধরে হেব্বি জোরে একটা মলা দিছিলাম। ফাজিলটার হাসি অবশ্য তারপরও থামাতে পারিনি।:P :D:D

নিশিকার সাথে আমার নিয়মিত কথা হত না। ও হঠাৎ হঠাৎ ফোন দিত। কথাও হত অল্প সময়ের জন্য। একটু কথা বলেই নানা তালবাহানা শুরু করত ফোন রাখার জন্য। আর আমি ফোন দিলে বেশিরভাগ সময়ই ফোন রিসিভ করত না। কিছুক্ষন পর অবশ্য নিজেই ফোন ব্যাক করত। অত্যন্ত রহস্যজনক আচরন ছিল মেয়েটার। আমি কিছুতেই বুঝতে উঠতে পারছিলাম না সে আসলে আমার কাছে কি চায়! মাঝে মাঝে ওর কথা শুনলে মনে হত-আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। মাঝে মাঝে আবার ওর কথায় আমার প্রতি চরম উদাসীনতাও প্রকাশ পেত। আর সবসময় শুধু আমার কথাই জানতে চাইত। আমার কি ভালো লাগে, কি মন্দ লাগে...ঘুরেফিরে শুধু নিজের সম্পর্কেই বলতে হত ওর কাছে। অথচ যখনই ওর ব্যাপারে কিছু জানতে চাইতাম, কৌশলে আমার প্রশ্নগুলা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। অনেক কষ্টে তার কাছে শুধু এতটুকুই জানতে পেরেছিলাম যে সে আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ে। কিন্তু কোন ডিপার্টমেন্ট, কোন ব্যাচ এমন কি কোন ফ্যাকাল্টি সেটাও আমাকে কখনো বলেনি। প্রায়ই ইউনিভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় ফোন দিত। ফোন দিয়ে বলত, “আমি তোমাকে দেখছি। তুমি এখন ওখানে বসে বসে চা খাচ্ছো”। আমি চা টা ফেলে দিয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক ওকে খুজতাম আর নিশিকা আমার কান্ড দেখে খিলখিল করে হাসত। এভাবে বেশকদিন চলছিল। একটা সময় আমার ধৈর্য্যের অবসান ঘটল। আমি একদিন কঁড়াভাবে বললাম, “তুমি যদি আমার সাথে দেখা না কর তাহলে তোমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই”। জবাবে ও হতাশকন্ঠে বলল, “দেখা হলে আমাদের সম্পর্কটা এমনিতেও থাকবেনা”। সেদিন কেন জানি খুব রুঢ় আচরন করেছিলাম ওর সাথে। মুখে যা এসেছে তাই বলেছি। হয়ত ওর রহস্যময় আচরনগুলোর কারনেই ওর প্রতি একটা চাঁপা ক্ষোভ ছিল আমার। সেদিন ফোন রাখার আগে আমি বলেছিলাম, “তুমি যদি সত্যিই আমার সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখতে চাও তাহলে তোমাকে আমার মুখোমুখি হতে হবে। এসব অবাস্তব, অর্থহীন কোনো রিলেশন-এ আমি বিশ্বাসী না”।

ফোন রাখার পর মনে মনে ঠিক করলাম, নিশিকা যদি এরপর কখনো ফোন দেয়ও...রিসিভ করব না। মজার ব্যাপার হল নিশিকা আর কখনো ফোন দেয়নি। ২দিন, ৩দিন, ৪দিন এমন করে সপ্তাহ পার হয়ে গেল কিন্তু ওর কোনো পাত্তা নেই। আমি কখনো বুঝিনি আমাদের মধ্যে আসলে কি রিলেশন ছিল। তবে ওর সাথে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, আমি ওকে খুব ফিল করছি। মানুষের মন বড়ই আজিব বস্তু...তাই না? এদিকে ঐ ঘটনার পর থেকে আমার ছাত্রও একদম চুপ। ভুলেও নিশিকার কথা কখনো মুখে আনে না।

সেমিস্টার ফাইনালের প্রেসারের কারনে একটা সময় নিশিকার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। তাছাড়া ওর কথা ভাবতে ভাবতে ইতিমধ্যে পড়াশোনার বারোটা বাজিয়ে বসে আছি। পরীক্ষায় কেমনে পাশ করব সেই চিন্তায় মাথা প্রায় নষ্ট হওয়ার জোগাড়। যাই হোক একদিন সকালে ক্যাম্পাসে চা খাচ্ছি। হঠাৎ দেখি আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক বড় আপু-রিক্তা নাম, হাসিমুখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নরমালী মেয়েদের সাথে খুব একটা কথা বলি না। রিক্তা আপুর সাথেও আগে হাই-হ্যালো ছাড়া তেমন কোনো কথা হয়নি। তবে উনাকে খুব ভালো করে চিনতাম। উনি আমাদের এলাকারই মেয়ে। আমি যে বাসায় টিউশনী করতাম সেই বিল্ডিংটার মালিক রিক্তা আপুরাই। ও আর একটা কথা বলে রাখা ভালো, রিক্তা আপু দেখতে মারাত্নক সুইট ছিল।
--“ভালো আছো, নিবিড়”?
--“জ্বী আপু ভালো। আপনি কেমন আছেন”?
রিক্তা আপু আমার কথার জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল।
-“আমাকে ক্ষমা করে দাও নিবিড়। আমিই সেই নিশিকা। তোমার সাথে আমি মস্ত বড় অন্যায় করেছি। কেন এরকম করলাম, জানি না”!

রিক্তা আপুর কথা শোনার পর আমি কিছুক্ষনের জন্য অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছিলাম। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। অবাক হয়ে রিক্তা আপুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। একটা সময় লক্ষ করলাম রিক্তা আপু চোখ মুছতে মুছতে প্রায় দৌড়ে আমার সামনে থেকে চলে যাচ্ছে। আমি অবশ্য পরে উনার ফোনে বেশ কয়েকবার ট্রাই করেছিলাম প্রতিবারই বন্ধ পেয়েছি।

বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

বজলু সাহেবের অনুশোচনা!!

লেখাপড়া জানা সত্ত্বেও বজলু সাহেব জীবনে চাকুরী-বাকুরী করেননি। রোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়া, সারাদিন গাধার খাটুনী খেটে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার মত একঘেঁয়েমী জীবন-যাপন নাকি বজলু সাহেবের চরিত্রের সাথেই যায় না। মাঝে মাঝে ভাবতেন ব্যবসা বানিজ্য করবেন। কিন্তু অতি মাত্রায় ধার্মিক বজলু সাহেব আবার পরকাল নিয়েও ব্যাপক চিন্তিত। এই জীবনে এত পয়সা-কড়ি, গাড়ী-বাড়ি দিয়েই বা হবে কি? এগুলা কি তিনি কবরে নিয়ে যাবেন? তাছাড়া মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে ধন-সম্পদের হিসাবও তো দিতে হবে! এসব চিন্তা-ভাবনা করার পর অবশেষে তিনি ব্যবসার কথাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। আপনারা হয়ত ভাবছেন, “তাহলে বজলু সাহেব করেন টা কি? উনার সংসারই বা চলে কিভাবে”?

বজলু সাহেবের বাবা অতি কষ্টে ঢাকা শহরে একটি ৫ কাঁঠা জমি কিনেছিলেন। মৃত্যুর বছর পাঁচেক আগে তিনি সেই জমিতে একটি একতলা দালানও তুলেছিলেন। বজলু সাহেব বুদ্ধি করে সেখানে আরো কয়েকটা ছোট ছোট রুম করে ফেলেছেন। সেগুলার ভাড়া দিয়েই আপাতত তার সংসার চলছে। বউ আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখেই আছেন তিনি। বজলু সাহেবের অন্যান্য ভাইয়েরা সমাজে বেশ ভালো ভাবেই প্রতিষ্ঠিত। বাবার এই ছোট সম্পত্তির প্রতি তাদের কোনো দাবী-দাওয়া নেই। তারা স্বেচ্ছায় বজলু সাহেবকে এখানে চড়ে-বড়ে খাওয়ার সুযোগ দিয়ে রেখেছে।


পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স্ক বজলু সাহেব প্রতিটি দিন কিভাবে পার করেন তার একটা নমুনা দেই। প্রতিদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই ফযরের নামাজ আদায় করেন তিনি। তারপর কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে আসেন। বজলু সাহেবের অনেকগুলা বদ অভ্যাসের মধ্যে একটা হল ফযর নামাজ আদায় করার পরপরই স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করা। ও এই ফাঁকে বজলু সাহেবের স্ত্রীর কথাও একটু বলে রাখি। তার স্ত্রীর বয়স ৪০-এর কাছাকাছি। তবে এই বয়সেও তিনি তার যৌবন মাশাল্লাহ ভালোভাবেই ধরে রেখেছেন। দেখতেও বেশ সুন্দরী। একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা পেশার সাথেও জড়িত আছেন। প্রতিদিন সাতসকালে বজলু সাহেব কিভাবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তার বউকে যৌনকর্মের জন্য আহবান করেন--একটু দেখা যাক...


--মাস্টরনী ও মাস্টরনী...এত বেলা হইল আর কত ঘুমাইবা?


--তোমার জ্বালায় সারাটা রাত ঘুমাইতে পারিনা। সকাল সকাল চোখটা একটু লাইগা আসে তখনও তোমার জ্বালাতন। হে মোর খোদা, কই যাই আমি!!


--ওরে আমার সোনা-ময়না পাখী, এমন কইরা কও কেন তুমি? তোমার পতি তোমারে একটু আদর সোহাগ করবার চায় সেইটা থিকাও কি তারে বঞ্চিত করবা?


--ওরে আমার বুইড়ারে...বুইড়ার কি বয়সের লগে লগে দিন দিন জৌলুসও বাড়তাছে নাকি?


বজলু সাহের তার স্ত্রীর এসব কথা শুনে শুধু দাঁত কেলিয়ে হাসেন। তারপর আস্তে আস্তে চুম্বন করার জন্য এগিয়ে যান। অতি মাত্রায় যৌনকাঁতর বজলু সাহেব অনেক সময় রুমের দরজা পর্যন্ত লাগাতে ভুলে যান। আকাশ-বাতাস কাপিয়ে যখন যৌন সঙ্গম শুরু করে দেন, দুনিয়ার কোনো হুশ আর তার থাকেনা।


বজলু সাহেবের ছেলে দশম শ্রেনীতে পড়ে। বেকার বজলু সাহেব প্রতিদিন তার ছেলেকে সাথে করে স্কুলে নিয়ে যান। বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব দু’মাইলের কাছাকাছি। এতটা পথ তিনি তার ছেলেকে হাটিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যান। স্কুল ছুটি হলে আবার হাটিয়ে হাটিয়ে বাসায় ফেরত আনেন। ছেলে বাবার প্রতি চরম বিরক্ত। তার অন্যান্য বন্ধুরা ক্লাস থ্রী-ফোর থেকে একা একা যাওয়া-আসা করে। স্কুলে তাকে এ নিয়ে অনেক টিকা-টিপ্পনীও শুনতে হয়।।


--আব্বা, প্রত্যকদিন এতটা পথ হাইটা হাইটা যাইতে ভালো লাগেনা। আজকে একটা রিকশা নেও না!


--চুপ থাক! রিকশা মারাইতে আইছে! তোর বয়সে আমি প্রতিদিন ৭ মাইল হাইটা স্কুলে যাইতাম। তাছাড়া আমি প্রতিদিন তোর লগে হাইটা হাইটা যাইনা?? কই আমার তো কুনু সময় খারাপ লাগেনা! যত হাটবি ততই শরীর সুস্থ থাকব। তোর বাপেরে দেখছ না এই বয়সেও কোন ডায়বেটিস, প্রেসার, হার্টের রোগ কিছুই না। বলতে পারছ কেন নাই? শুধুমাত্র এখনো হাটাহাটি করি দেইখা! বুঝছস??


--আব্বা আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমারে নিয়া খুব হাসাহাসি করে। আমি তো এখন অনেক বড় হইছি। আমারে এখন একলা একলা ছাইড়া দিলে কি হয়?


--এহহহ শখ কত? তোমারে একলা একলা ছাইড়া দিমু আর তুমি চিপাচাপায় গিয়া বিড়ি ফুকবা আর মাইয়াগো লগে টাঙ্কিবাজী করবা, তাই না?? আর একদিন এসব কথা মুখে আনলে এমন চটকানা লাগামুনা!! বেদ্দপ কোনানকার!!


আপনারা হয়ত ভাবছেন বেকার বজলু সাহেব শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্যই ছেলের পিছনে লেগে আছেন বা অনেকে হয়ত ভাবছেন, তিনি অত্যন্ত দায়িত্ববান একজন পিতা! আসল ব্যাপার কিন্তু তা না! স্কুল গেইটে প্রতিদিন অনেক মহিলা গার্ডিয়ান ঘন্টার পর ঘন্টার দাঁড়িয়ে থাকেন। ছোট বাচ্চাদের ছুটি না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করেন। এই সুযোগে বজলু তাদের সাথে টাঙ্কিবাজী করার চেষ্টা চালান। কথা-বার্তায় বজলু সাহেব বেশ ভালোই পটু। কিছু গার্ডিয়ানের সাথে তার বেশ ভালোই ভাব হয়েছে। স্কুলে গিয়েই তাদের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠেন আর চামে চিকনে তাদের গোপন অংগসমুহের দিকে ছুঁচোর মত তাকিয়ে থাকেন। তবে কিছু গার্ডিয়ান অবশ্য বজলু সাহেবের মতলব ইতিমধ্যে টের পেয়ে গেছেন। ইদানিং নাকি ২-১ জন বজলু সাহেবের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করারও চিন্তা-ভাবনা করছেন। তো বজলু সাহেব, গার্ডিয়ানদের সাথে সাধারণত কি টাইপ বাকচিত করে থাকেন তার একটা নমুনা দেয়া যাক!


--ভাবীর লইগা মাঝে মাঝে পরানডা কাইন্দা উঠে আমার। এই রোদের মধ্যে খাইয়া না খাইয়া প্রতিটাদিন দাঁড়ায় থাকেন। এত সুন্দর গায়ের রঙটাও ময়লা হইয়া যাইতেছে দিন দিন!


--কি করব ভাই? ছোট বাচ্চা একা রেখে যেতেও ভয় লাগে। কয়েকটাদিন তো, একটু কষ্ট করতেই হবে! আর একটু বড় হোক তারপর একা ছেড়ে দেব।


--ভাই কি মাঝে-সাঝে ফোন টোন দেয় নি? নাকি বিদেশ গিয়া আপ্নের কথা ভুইলাই গেছে?


--না না কি বলেন আপনি? ও তো প্রতিদিনই অন্তত একবার হলেও ফোন দেয়।


--হুম। বুঝি ভাবি বুঝি, জামাই বিদেশ থাকলে বউ-এর কত কষ্ট সেইটা আমি ভালো কইরাই বুঝি! তো ভাবী কোন সমস্যা টমস্যা হইলে বইলেন। ভাই নাই তাতে কি? আমরা তো আর মইরা যাই নাই!


বজলু সাহেবের এই টাইপ অশ্লীল ইঙ্গিত অনেক গার্ডিয়ান অনেক ক্ষেত্রে বুঝেও না বোঝার ভান করে এড়িয়ে যায়!


--ভাবী কিন্তু শরীরের দিকে যত্ন নিয়েন। শরীর তো দেখি আগের চেয়ে অনেক শুকনা শুকনা লাগেতেছে।


স্কুল ছুটি হলে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফেরার সাথে সাথে যোহরের নামায আদায় করেন বজলু সাহেব। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষে হাল্কা-পাতলা একটা ঘুম দেন। এটা অবশ্য তার বহুত পুরোনো অভ্যাস। আসরের ওয়াক্ত হলে তিনি ঘুম থেকে উঠে আসরের নামায আদায় করেন। তারপর মাগরীরের আগ পর্যন্ত বাইরে হাটাহাটি করেন। এর মাঝে যদি পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে তাকে জোর করে বসিয়ে দুনিয়ার আজাইরা আলাপ জুড়ে দেন। বজলু সাহেব ঘুরে ফিরে যেই ব্যাপারটা তার আলাপের মধ্যে নিয়ে আসেন তা হল যৌনতা। একারনে তার সমবয়সী লোকজন তাকে ইদানিং এড়িয়ে চলেন। তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলার রুচি বা আগ্রহ প্রায় সবাই হারিয়ে ফেলেছেন। সবাই তো আর বজলু সাহেব না!! বজলু সাহেব আজকাল ছেলের বয়সী চ্যাংড়া পোলাপানের সাথেই যাইচা পইড়া কথা বলেন...


--আরে তুই আফজাল ভাইয়ের পোলা রতন না?


--আসস্লামুআলাইকুম চাচা কেমন আছেন?


--হন হন কইরা হাইটা যাচ গা! এলাকার মুরুব্বীগোরে চোখে পড়েনা নাকি?


--ভুল হইয়া গেছে চাচা। মাফ কইরা দিয়েন। চাচার শরীর ভালো নি?


--চাচার শরীরের খবর জিগাছ, নিজের চেহারা-সুরুত আয়না দিয়া দেহছ নি মাঝে মধ্যে?


--কেন চাচা? শরীর তো ঠিকই আছে।


--কয় কি পোলায়! চাপাডা যে ভাইঙ্গা দেড়হাত ভিতরে গেছে গা হেই খবর আছে নি তোর? কাছে আয় তোরে কিছু দামী পরামর্শ দেই!


--চাচা আজকে একটু কাজ আছে কালকে কইয়েন।


--দুইদিন পরে বিয়া করলে বউ-এ যহন লাত্থি দিয়া খাটের তিকা ফালায় দিব তহন তো চাচারে হারিকেন দিয়া খুজবি!!


বাপের বয়সী একটি লোকের কাছ থেকে এই ধরনের কথা শোনাটা চরম বিব্রতকর। কিন্তু কিছু করার নাই। বজলু সাহেবের ফাঁদে পড়লে এসব কথা শুনতেই হবে।


--তোর চেহারার যেই হাল দেখি...আমার তো মনে হয় প্রতি রাইতেই লুঙ্গি ভিজাছ!


--ধুরর চাচা! কি যে কন না আপনে!


--ঠিকই কই! চুল দাঁড়ি তো আর এমনি পাকাই নাই রে বাপ!


--চাচা আজকে আমার সত্যি সত্যি দেরী হইয়া যাইতাছে। আজকের মত ছাইড়া দেন!


--আইচ্ছা যা তাইলে! আমার লগে সময় কইরা একবার দেহা করিছ। একটা তাবিজ দিমুনে তোরে। তাবিজটা কোমড়ে বাইন্দা...


--চাচা আমি গেলাম।


--আরে শোন......


মাগরীবের নামাজ আদায়ের পর বজলু সাহেব যান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায়। এক স্ত্রীতে নাকি কোনোভাবেই চলছিল না বজলু সাহেবের। তাই বছর দুয়েক আগে লুকিয়ে লুকিয়ে আর একটি বিয়ে করেছেন তিনি। এই বিয়ের খবর তিনি সবার কাছে গোপন রেখেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর চেহারা সুরুত প্রথম স্ত্রীর ধারে কাছেও নেই। তবে মহিলার শরীর স্বাস্থ্য খারাপ না। বয়স ও খুব একটা বেশী না। বজলু সাহেব দ্বিতীয় স্ত্রী বজলু সাহেব সম্পর্কে সবকিছু জেনেই বিয়ে করেছে। মহিলা আসলে খুবই অসহায়। একটু খানি আশ্রয়ের জন্য বলতে গেলে অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি বজলু সাহেবকে বিয়ে করেছিলেন। বজলু সাহেব নিজ এলাকা থেকে একটু দূরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। সেখানেই তার দ্বিতীয় স্ত্রী এক দুঃসম্পর্কের বোনকে নিয়ে বসবাস করেন। বজলু সাহেব প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেখানে যান। ঘন্টা তিনেক কাটিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসেন। ইদানিং দ্বিতীয় স্ত্রীর দুঃসম্পর্কের বোনের দিকেও কুনজর পড়েছে বজলু সাহেবের। মেয়েটির বয়স ২১-২২ হবে। খুবই লাবন্যময় চেহারা! বজলু সাহেব মাঝে মধ্যে চামে চিকনে ঐ মেয়ের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন কিন্তু দ্বিতীর স্ত্রীর কড়া প্রহরায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেন না!


এভাবেই চলছে বজলু সাহেবের দিনকাল। এই রুটিনের ব্যাতীক্রম যে একেবারেই হয়না তা বলা যাবেনা। সেটা নিয়ে আজকে না হয় নাইবা গেজালাম!


যাই হোক রোজকার মত সেদিনও মাগরীবের নামায আদায় করে বজলু সাহেব তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় গেলেন। দরজা নক করতেই দেখলেন তার সুন্দরী শ্যালিকা দরজা খুলে দিয়েছে। শ্যালিকাকে এই প্রথম দরজা খুলতে দেখে একটু অবাকই হলেন বজলু সাহেব। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কেন যে মেয়েটাকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে রাখে, বজলু সাহেব আজও সেটা বুঝে উঠতে পারেননি।


--তোমার আফায় কই?


--দুলাভাই আপনি বসেন। আপা এখনি চলে আসবে। পাশের ফ্ল্যাটেই আছে। আমি কি ডেকে দিব?


বজলু সাহেবের খুশী আর দেখে কে! কাচাঁপাকা দাড়ির আড়ালে অটোমেটিক মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল। এই সুযোগের অপেক্ষায়ই তো বজলু সাহেব এতটা দিন ওত পেতে ছিলেন!


--আরে না না! তোমার আফায় তো ঘর থিকা এমনেই বাইর হয়না। আজইকা একটু শান্তিমত গল্পগুজব করুক।


--দুলাভাই আমি আপনের জন্য এককাপ চা বানিয়ে আনি?


--ওলে আমার পেয়ারী শ্যালিকা রে...চা পরে দিও। আসো আমার পাশে একটু বস। তোমার লগে কিছুক্ষন খোশগল্প করি।


বজলু সাহেবের সাথে গল্প করতে কখনোই তেমন একটা আরামবোধ করেনা রিনি(শ্যালিকার নাম)। রিনি সবসময়ই খেয়াল করে যে, বজলু সাহেব কখনো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনা, কথা বলে বুকের দিকে তাকিয়ে। আজকে রিনিকে একা পেয়ে একটু বেশীই অশ্লীলভাবে তাকাচ্ছে বজলু সাহেব। প্রচন্ড বিব্রতকর মুহুর্তের এক পর্যায়ে রিনি বলল......”দুলাভাই আমি চা বানিয়ে আনছি”। রিনি যখন উঠে যাচ্ছিল বজলু সাহেব শক্ত করে রিনির হাত চাপ ধরল। অবাক হয়ে রিনি বলল, “দুলাভাই কি করছেন আপনি? ছাড়েন আমাকে...” বজলু সাহেব হ্যাচকা টান দিয়ে রিনিকে বিছানার উপর ফালালো। রিনির মুখ চেপে ধরে নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষন করল তাকে।


--শুয়োরের বাচ্চা বুইড়া!! আমি সবার কাছে তোর কুকীর্তির কথা ফাঁস করে দিবো। তোকে আমি আজীবন জেলের ভাত খাওয়ায় ছাড়ব...কুত্তার বাচ্চা!!


--কি কইলি মাগী?? তুই আমারে জেলের ভাত খাওয়াবি?? আর একটা কথা মুখ দিয়া বাইর করলে একদম খুন কইরা ফালামু!! তুই চিনছ আমারে!! চুপ একদম চুপ!!


রিনি যখন প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে লাগল, বজলু সাহেব কোনো উপায়ান্তর না দেখে রিনির গলা চেপে ধরল। বজলু সাহেব রিনিকে খুন করতে চাননি কিন্তু প্রচন্ড শক্ত ভাবে গলা চেপে ধরার কারনে রিনির মৃত্যু ঘটল!


বজলু সাহেব অত্যধিক ঘাঁবড়ে গেলেন। ভয়ে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল তার। হাত পা কাঁপতে লাগল। কি করবেন কিছুই ভেবে পেলেন না তিনি! ঠিক তখনই তার দ্বিতীয় স্ত্রী-শরিফা দরজা নক করল। বজলু সাহেব ভেবে পাচ্ছিলেন না কি করবেন! ভয়ে ভয়ে দরজা খুললেন।


--কি ব্যাপার তোমারে এমন দেখা যাইতেছে কেন? ঘামতেছো কেন তুমি?


--শরীফা...আমি রিনিরে ইচ্ছা কইরা খুন করি নাই। তুমি তো তোমার স্বামীরে চেনো!


--কি বললা তুমি?? তুই আমার বইনরে খুন করছ?......খুন করছি তুমি????


--“আমি কিছু করি নাই...আমার কুনু দোষ নাই”---পাগলের মত প্রলাপ শুরু করল বজলু সাহেব!



এই কি হইছে তোমার? পাগলের মত কি বলতেছ ঘুমের মধ্যে? প্রথম স্ত্রীর কথায় হুরমুর করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল বজলু সাহেব। এটা কি তাহলে দুঃসপ্ন ছিল? বজলু সাহেবের যেন বিশ্বাসই হতে চাচ্ছিল না! তিনি যেন নতুন জীবন ফিরে পেলেন।


--বউ আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়া আসবা?


--খারাপ সপ্ন দেখছিলা? আয়তুল কুরসী পইড়া বুকে একটা ফুঁ দাও। আমি পানি আনতেছি।


বজলু সাহেব মনে মনে ভাবলেন...ঘটনাটা যদি সত্যি সত্যি ঘটে যেত তাহলে কি জবাব দিতেন তিনি আল্লাহর কাছে? আল্লাহ কি খুনী ব্যাক্তিকে কোনদিন মাফ করতেন? অনন্তকাল কিভাবে জাহান্নামে পার করতেন তা ভেবেই ভয়ে কুকরে উঠলেন তিনি!!


লুঙ্গি বিড়ম্বনা

আজকে সামুতে লুঙ্গি সংক্রান্ত একটা পোস্ট পড়ছিলাম। লেখকের প্রসংশাই করতে হয় তার অনবদ্য লেখনীর জন্য। পোস্টটি পড়ে আমারও লুঙ্গি নিয়ে কিছু লিখতে মন চাইল। তাই লিখতে বসে পড়লাম। লুঙ্গি আমার খুব পছন্দের একটা পোশাক। বাসায় যতক্ষন থাকি লুঙ্গি পড়ে থাকতেই পছন্দ করি বেশি। লুঙ্গির মত আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পোশাক দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। একবার শুনেছিলাম বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এসে অস্ট্রেলিয়ার কিছু প্লেয়ার লুঙ্গির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন এর চেয়ে আরামদায়ক পোশাক আর কিছু হতে পারেনা। শুধু তাই নয়, তারা সাথে করে বেশ কিছু লুঙ্গি অস্ট্রিলিয়াতে নিয়েও গিয়েছিলেন।।। :D ;)

লুঙ্গি নিয়ে যতই লাফালাফি করিনা কেন...লুঙ্গি নিয়ে যে আমার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হইনি সেটাও অস্বীকার করবনা। বহুদিন থেকে লুঙ্গি পড়ি ঠিকই কিন্তু এখন পর্যন্ত লুঙ্গির গিটটাই ঠিকমত বাধতে পারিনা। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খুব কম দিনই লুঙ্গি আমি আমার পরনে দেখেছি। রাতের বেলা লুঙ্গি পড়ে ঘুমিয়েছি সকাল বেলা লুঙ্গি পরে থাকতে দেখেছি মেঝেতে। এই কারনে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমি সবসময় একটা কাথা ব্যবহার করি। কি করব লুঙ্গিপ্রেমী মানুষ লুঙ্গিটা তো ছাড়তেও পারিনা তাই গরমকালেও কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়।
:|

একবার গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাসায়। রাতে থাকার কোন প্ল্যান ছিল না কিন্তু বন্ধুর জোরাজুরিতে শেষমেষ থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেদিন পরনে ছিল মোটা একটা জিন্স প্যান্ট। কিন্তু আমার মত লুঙ্গিপ্রেমী কি আর জিন্স পরে ঘুমাতে পারে...বলেন?? বন্ধুর একটা লুঙ্গি পরলাম সেই সাথে মোটা একটা কাথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। রুমের দরজাটা বন্ধুকে ভাল করে লাগিয়ে দিতে বললাম।


এদিকে আমার অনেকগুলা বদঅভ্যাসের মধ্যে একটা হল দেরী করে ঘুম থেকে উঠা। আমার বন্ধু আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরে। সেদিনও ব্যাতিক্রম হয়নি। সে সকাল বেলা আমাকে রেখেই বাইরে হাটতে চলে গেল। রুমের দরজা তো খোলাই থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এদিকে বন্ধুর ছোট বোন সকাল বেলা রুমের কাছে এসে চিৎকার করে ডাক দিল, “ভাইয়া টেবিলে নাস্তা দেয়া হয়েছে”। আমার ঘুম সাথে সাথে ভেঙ্গে গেল। আমি রিয়ার(বন্ধুর বোনের নাম) দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মুখ টিপে টিপে হাসছে। তৎক্ষনাৎ কিছু বুঝতে পারিনি যদিও। রিয়া চলে যাওয়ার পর দেখলাম, লুঙ্গি খাটের এককোণায় পরে আছে। অবশ্য কাথা জায়গা মতই ছিল।


লুঙ্গিটাকে আমি এত ভালোবাসি কিন্তু লুঙ্গি কেন আমাকে এত বিড়ম্বনায় ফেলে...বলতে পারবেন?
:(

অর্থহীন এই জীবন!!

মানুষ কতটাই না পরিবর্তনশীল, তাই না? একটু ভেবে দেখুন তো, আজ থেকে ১০ বছর আগের “আপনি”র সাথে এখনকার “আপনি”কে কোনভাবে মেলাতে পারছেন কিনা? আমি মোটামুটি নিশ্চিত পারছেন না। আজ থেকে ১০ বছর পরের আপনিকেও এখনকার আপনি’র সাথে মেলাতে পারবেন না। রাগ করছেন আমার প্রতি? হয়ত মনে মনে বলছেন, “তুই ব্যাটা কোথাকার কোন মাতবর আসছিস যে আগে ভাগেই সেটা জেনে বসে আছিস?” রাগ করবেন না ভাই। আমি আমার নিজের, আমার বন্ধুদের, চেনা-মানুষগুলোর বদলে যাওয়া দেখেই একথা বলার সাহস পেয়েছি। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, আজ থেকে দশ বছর আগে আপনার কাছে জীবনের “মানে” যা ছিল এখন আপানার কাছে জীবনের “মানে” তাই কিনা? একটু ভাল করে চিন্তা করে দেখুন। আমি নিশ্চিত ঋনাত্নক উত্তর পাবেন। অথচ একসময়্কার সেই “মানে”র জন্য কত মূল্যবান সময়ই না আপনি নষ্ট করে বসে আছেন। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব গালি দিতে মন চায় তাই না?? এখন মাঝ রাতে কখনো ঘুম ভেঙ্গে গেলে হয়ত মনে মনে ভাবেন, “কি করলাম আমি? কি পেলাম এই জীবনে? কেন এমন হল আমার এই জীবনটা? আমার জীবন তো এমন হওয়ার কথা ছিল না!! আমি কি আমার জীবনকে আরো সুন্দর করে সাজাতে পারতাম না?”

আমার খুব হাসি পাচ্ছে, জানেন? খুব করুণা হচ্ছে আপনার জন্য। এই আপনি এখন আপনার সেই অতীতের আপ্নি’কে দোষারোপ করছেন। কিন্তু আজ থেকে ঠিক ১০ বছর পর, এই আপ্নিই আবার এখনকার আপ্নিকে দোষারোপ করবেন। এভাবেই দোষারোপ করতে করতে আপনি একদিন মারা যাবেন। জীবনের অর্থটাই আপনার কাছে অজানা থেকে যাবে।

ফার্স্ট ডেট নিয়ে চিন্তিত?

মোবাইলে বা নেটে কোন সুন্দরীকে পটিয়ছেন। এবার ঠিক করলেন তার সাথে ডেটিং করতে যাবেন। প্রথম ডেটে স্বভাবতই আপনি একটু নারভাস থাকবেন। আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি কষ্টবিষ্টে নারভাসনেসটা কাটালেন, খুব সুন্দর একটা সময় সেই সুন্দরীর সাথে অতিবাহিত করলেন। পরদিন সেই নারীকে ফোন দিলেন কিন্তু সে আর আপনার ফোন রিসিভ করছেনা। বারবার ট্রাই করেই যাছেন কিন্তু হতাশই হচ্ছেন। শুনুন জনাব, আর ট্রাই করে লাভ নেই। এখন খামাখা ঐ মেয়েকে গালাগালি করবেন না। আপনার আতলামীর কারনেই হয়ত মেয়েটি আর ফোন রিসিভ করছেনা। হয়ত আর কোনদিনই করবেনা।

এবার একটু লাইনে আসেন। নিজের ভুলগুলো শুধরে নিন। এরপর আপনাকে আর ফোন দিতে হবেনা। ঐ সুন্দরীই আপনাকে ফোন দিয়ে কুল পাবেনা। নিচে কিছু টিপস দিলাম। আশা করি কাজে লাগবে।


নিজের মৌলিকতা হারাবেন না

সবাই কিন্তু মজা করে কথা বলতে পারেনা। আর আপনার পারতেই হবে এমন কোনো কথাও নেই। দেখা গেল সুন্দরীকে মজা দিতে গিয়ে এমন কিছু একটা বলে ফেললেন যা আপনার ব্যাক্তিত্তের সাথে যায় না। সেই মেয়ে যদি কোনভাবে বুঝে ফেলে আপনি তাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করছেন তাহলে কিন্তু আপনি তার কাছে হাল্কা হয়ে যাবেন। আজকালকার মেয়েরা কিন্তু অনেক চালাক-ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। আর যেই বিষয়টা সম্পর্কে আপনার ধারনা অল্প সেটা নিয়ে বেশী কথা বলতে যাবেন না। হোক না সেটা হিন্দি সিনেমা!!

দেরী করা চলবে না

প্রথম ডেটিং-এ কোনোভাবেই দেরী করা চলবেনা। কারন এতে আপনার অলসতা বা পার্টনারের প্রতি আপনার উদাসীনতা প্রকাশ পায়। সে হয়ত ধরে নিবে আপনি তাকে খুব একটা সিরিয়াসলি নেননি। যদি রাস্তায় যানযট বা অন্য কোন সমস্যা হয় অবশ্যই তাকে ফোন করে ইনফর্ম করবেন। অনেকে ভাব নেয়ার জন্য একটু দেরী করে যান এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

পরিচ্ছন্ন হোন

মেয়েরা কিন্তু একটা ছেলের চেহারার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্ত্বপূর্ণ ভাবে সে কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বেশিরভাগ ছেলেরাই একটু এলোমেলো থাকতে পছন্দ করে যা মেয়েরা খুবই অপছন্দ করে। দেখা গেল, সেদিন আপনি ভালমত ব্রাশ করেননি। মুখ থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে কথা বলার সময়--অবস্থাটা কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন? শরীর থেকেও যাতে বিশ্রি ঘামের গন্ধ না বের হয় সেজন্য ভাল পারফিউম মেখে যেতে ভুলবেন না। আপনার চুল ঠিকমত ছাটানো কিনা বা নখ ঠিকমত কাটা কিনা এসব সুক্ষ সুক্ষ ব্যাপার মেয়েরা খুব লক্ষ করে। আগেভাগেই সতর্ক হোন।

ডেটিং-এর সময় অন্য মেয়ের প্রসংশা করতে যাবেন না

আপনি যখন কোনো একটি মেয়ের সাথে ডেটিং করতে যাবেন, মেয়েটি কিন্তু ধরে নিবে অন্তত ডেটিং-এর পুরো সময়টা আপনি শুধু তাকেই উতসর্গ করেছেন। ঐ সময় আপনি যদি পরিচিত অন্য কোন মেয়ের প্রসংশা তার সামনে শুরু করেন, সে হয়ত ভাবতে পারে তার প্রতি আপনার ইন্টারেস্ট কম। কিছু কিছু ছেলেদের কমন হেভিট হল সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আড়চোখে তাকানো। আপনাদের সামনের টেবিলেই হয়ত কোনো অনিন্দ্য সুন্দরী বসে আছে...তাতে কি? ভুলেও তাকাবেন না!! যদি ধরা খান, তাহলে ওটাই হতে পারে আপনার লাস্ট ডেট।

তাকেও কথা বলার সুযোগ দিন

অনেকে হয়ত অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। কথা দিয়ে আরো ভালমত ইম্প্রেস করার জন্য হয়ত মজার মজার গল্প বা জোক্স একটার পর একটা বলেই গেলেন। মনে রাখবেন, কথোপকথোনে কিন্তু দু’জন মানুষেরই অংশগ্রহন লাগে। আপনি অবশ্যই আপনার কথা বলবেন কিন্তু তাকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।

কোন প্রকার অভিযোগ করা যাবেনা

হয়ত কোন কারনে সেইদিনটা আপনার ভাল কাটেনি। তাই বলে ফার্স্ট ডেট করতে এসেই কোন প্রকার হতাশার কথা ডেট-পার্টনারের সাথে শেয়ার করবেন না। এসেই বললেন, “এই শহরের ট্রাফিক জ্যাম অসহ্য!আর থাকবই না এই শহরে!!” এই ধরনের হতাশাব্যাঞ্জক কথাবার্তা কিন্তু পার্টনারের বিরক্তির উদ্রেক ঘটাতে পারে। আপনার ভিতরে যতই হতাশা থাকুক, চেহারায় বা কথাবার্তায় সেটা প্রকাশ করা যাবেনা। মনে রাখবেন, সে কিন্তু কোন হতাশার কথা শুনতে ডেটিং-এ আসেনি। আপনার সাথে সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটানোর জন্যই তার ডেটিং-এ আসা।

শারীরিক ভাবে এগ্রেসিভ হওয়া যাবে না

মনে মনে হয়ত ভাবছেন আপ্নার পার্টনারকে কথাবার্তা দিয়ে বেশ ভাল ভাবেই পটিয়ে ফেলেছেন। তাড়াহুড়া করেই কিস করার জন্য এগিয়ে গেলেন। দয়া করে এই কাজটি করতে যাবেননা। তার চোখের ইশারা-ইঙ্গিত ভালমত বুঝে নিন। সে আদৌ কোন শারীরিক স্পর্শের জন্য তৈরী কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।

মিথ্যা আশা দেবেন না

যদি দেখা হওয়ার পর পার্টনারকে পছন্দ না হয়ে থাকে, বিদায়কালে তাকে কোন প্রকার মিথ্যা আশা দেবেন না দয়া করে। তার সাথে যদি পুনরায় আর ডেট করার ইচ্ছা না থাকে তবে তাকে মিথ্যা কথা না বলে বলবেন, “তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল” বা “গুড বাই”। আবার “দেখা হবে বা কথা হবে” এরকম আশা না দেয়াই ভাল।

আশা করি উল্লেখিত গাইডলাইনগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার ফার্স্ট ডেট-কে চিরস্মরনীয় করে রাখতে পারবেন।

আমরা কি গরুর চেয়ে উত্তম নাকি অধম??

আজকে দুপুর বেলা চ্যানেল টিপতে টিপতে হঠাৎ “এনিমেল প্ল্যানেট”-এ এসে থমকে গেলাম। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম একটা ষাড় কিভাবে ৭-৮টা বাঘের সাথে লড়ে নিজের জীবন বাচানোর আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঘগুলা অনেক চেষ্টা করেও ষাড়টাকে কোনোভাবেই মাটিতে শোয়াতে পারছিল না। মেজাজটা খুব খারাপ লাগছিল যখন দেখলাম আশেপাশের আরো একপাল ষাড়--হয় তাকিয়ে তাকিয়ে তামাশা দেখছে বা একটু দূরে গিয়ে চুপচাপ ঘাস খাচ্ছে। মনে মনে বাকি ষাড়্গুলাকে গালি দিচ্ছিলাম--“আরে বোকা প্রানী, তোদের জাত ভাইয়ের উপর এমন একটা আক্রমন চলছে তোরা কয়েকজন একটু এগিয়ে গেলেই তো বাঘগুলা লেজ তুলে পালায়!” হঠাৎ দেখলাম অন্য একটা ষাড় প্রচন্ড গতিতে বাঘগুলার দিকে তেড়ে আসল। লম্বা ধারালো শিং দিয়ে একটা বাঘকে এত জোরে আঘাত করল যে বাঘটা উড়ে গিয়ে দশ হাত দূরে পড়ল। ঐ বাঘের বেহাল দশা দেখে, বাকি বাঘগুলা দেখলাম চোরের মত পালাচ্ছে। এরপর ষাড় দুটো...আমরা যেভাবে বিজয় উল্লাস করি অনেকটা সেভাবেই উল্লাস করতে করতে মূল ষাড়ের পালের সাথে মিশে গেল।

এবার আপনাদের আর একটা গল্প বলি। কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় কিছু বখাটে মাস্তান টাইপ ছেলে মদ টদ খেয়ে খুব মাতলামী শুরু করেছিল। এলাকার একজন মুরুব্বী খুব ভদ্রভাবে ছেলেগুলাকে মাতলামী বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করল। মাতালগুলা মুরুব্বীর কথা তো শুনলই না বরং তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। সবার সামনে বয়স্ক লোকটিকে প্রচন্ড মারধর করল। ভাগ্য ভাল অল্পের জন্য লোকটি সেদিন প্রানে বেচে গিয়েছিলেন। আপনারা কি লক্ষ করলেন, এতগুলা মানুষের চোখের সামনে একটা লোককে ছেলেগুলা এভাবে মারল অথচ কেউ এগিয়ে এল না!! কয়েকজন লোক যদি সেদিন সাহস করে এগিয়ে আসত তাহলে কি মাস্তান ছেলেগুলাও সেই বাঘদের মত লেজ তুলে পালাতে বাধ্য হত না??


এখন আপ্নারাই বলেন, আমরা কি গরুর চেয়ে উত্তম নাকি অধম??

"যাহা ভোগ করিতে পারবিনে তাহার দিকে অযথাই লোভাতুর দৃষ্টিপাত করিসনেরে হতচ্ছাড়া!!”

শীতের সকালে হঠাত ঝরঝর করে বৃষ্টি হচ্ছে--ব্যাপারটা হয়ত অনেকেই দারুনভাবে উপভোগ করেন। ব্যাপারটা উপভোগ করার মতই আসলে। আমিও দারুন এনজয় করি এই বৃষ্টিটা। আর আপনারা হয়ত জানেন শীতের সিজনে বৃষ্টি কিন্তু সচরাচর হয়ও না। একবার ভেবে দেখুন তো--শীতের সকালে বৃষ্টি হচ্ছে আর আপনি লেপ কম্বল মুড়ু দিয়ে আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। অন্যরকম একটা ভালো লাগা অনুভূত হচ্ছেনা? আর যারা বিবাহিত, তাদের কথা আর কি বলব!! এই রকম একটা আবহাওয়ায় প্রিয়তমা স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকার যে কি সুখ--বিবাহিত না হলেও যে কিছুটা অনুভব করতে পারিনা তা বলব না!;)

আজ ছিল সেরকমই একটা দিন। তবে দিনটা আমার জন্য মোটেও ফেবারেবল ছিল না। ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে তাও আবার সেমিস্টার ফাইনাল। লেপ কম্বল মুড়ূ দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা কি আর আমার সাজে? সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বের হলাম। আমার বাসা থেকে মেইনরোডের দুরত্ব একদম কমও না। এদিকে কোনো রিকশার নাম গন্ধও পাচ্ছিলাম না। রাস্তাঘাট কাঁদা পানিতে একাকার। এই অবস্থায় হেটে হেটে মেইনরোড পর্যন্ত যেতে হবে। বড়ই কষ্টকর এবং বিরক্তিকর একটা কাজ। কিন্তু কিছু তো করারও নেই। ফাইনাল পরীক্ষা বলে কথা! মিস হয়ে গেলে সর্বনাশ! কষ্টেবিষ্টে মেইনরোডে আসার পর দেখি অল্পের জন্য ভার্সিটির বাসটাও মিস করে বসে আছি। কেন যেন আজকের দিনটার উপরেই মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। যাই হোক এরপর শাহবাগ পর্যন্ত গেলাম। বারডেম হাসপাতাল থেকে যখন রাস্তা ক্রস করে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলাম, পথিমধ্যে এক অপুর্ব রুপবতী রমনী আমার চোখে পড়ল। আপনারা কি স্বর্গের অপ্সরী তিলোত্তমার নাম শুনেছেন? তিলোত্তমা ছিলেন সর্বাঙ্গ সুন্দরী এক রমনী। তিনি নাকি এতই সুন্দরী ছিলেন যে স্বয়ং ব্রহ্মা-ই(স্রষ্টা হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী) তিলোত্তমার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। মেয়েটিকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল স্বয়ং তিলোত্তমাই বোধ হয় আজ ধরণীতে নেমে এসেছে। মেয়েটির অপূর্ব সুন্দর মুখশ্রী দেখে আমি মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে মেয়েটি ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। ভেজা শরীরে মেয়েটিকে যে অপূর্ব সুন্দর লাগছিল আমি আপনাদের বলে বোঝাতে পারবনা। হঠাত একসময় মেয়েটির সুউচ্চ, সুঢৌল পর্বতসম বক্ষ দুটি আমার চোখে পড়ল। মনে হচ্ছিল স্বর্গের সবচেয়ে সুমিষ্ট ফল দুটি সে তার বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিধাতার হাতের নিখুত স্পর্শ ছাড়া এরকম সুন্দর সেইপ দেয়া অসম্ভব। মনে মনে ভাবছিলাম বিধাতা হয়ত অনেক সময় নিয়ে এবং অনেক যত্ন করে মেয়েটিকে তৈরী করছেন। মেয়েটির বক্ষ দর্শন করতে করতে যখন রাস্তা পার হচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় একটা গাড়ী আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই দিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে বেচে গিয়েছি। যদি মারা যেতাম আল্লাহর কাছে কি জবাব দিতাম? তাছাড়া একটা মেয়ের বক্ষ দর্শন করা অবস্থায় মৃত্যুর মত লজ্জাজনক মৃত্যু আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। ছিঃ ছিঃ...
X(

কিন্তু কুকুরের লেজ কি আর কখনো সোজা হয়? রাস্তা পার হয়ে যখন ক্যাম্পাসের দিকে ঢুকছিলাম তখনও মেয়েটির মাখনের মত দেহটা থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। একটা সময় মেয়েটার চোখে চোখ পড়ে গেল। মেয়েটি খুব বিরক্তির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো এবং ওড়নাটি আগের চেয়ে একটু গুছিয়ে নিল। আমি এক মূহুর্তের জন্য চোখ সরিয়ে পুনরায় যখন মেয়েটির দিকে তাকালাম...দেখলাম সে মুখ টিপে হাসছে। মেয়েটার হাসি দেখে আমার হার্টবিট এত বেড়ে গেল যে মনে হচ্ছিল হার্টটা এখন খুলেই বেড়িয়ে আসবে। হঠাত মেয়েটির সাথে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। কল্পনা করা শুরু করলাম আমি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির মাঝে হেটে যাচ্ছি। মেয়েটিও আমাকে পরম মমতায় আলিঙ্গন করে আছে। আমরা একে অপরের শরীরের উত্তাপ বিনিময় করছি। ঘোর কাটতেই দেখলাম মেয়েটি আমার চোখের সামনে একটা রিকশা করে হনহন করে চলে যাচ্ছে। বোকার মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমার আর কী-ই বা করার ছিল?? কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। নিজের উপর কেন জানি খুব রাগ হচ্ছিল। ঠিক তখন-ই একটা ঐশ্বরিক বাণী আমার কানে আসল...”"যাহা ভোগ করিতে পারবিনে তাহার দিকে অযথাই লোভাতুর দৃষ্টিপাত করিসনেরে হতচ্ছাড়া!!”"

মোবাইল প্রেম!

নতুন নতুন যখন মোবাইল কিনেছিলাম মোবাইলটা টেপাই ছিল তখন আমার একমাত্র কাজ। কারন অকারনেই মোবাইলটা টিপতাম। বেশিরভাগ সময়ই খেলতাম গেমস কারন ঐ সময় মাল্টিমিডিয়া ফোন এভেইলেবল ছিলনা। একসময় বিরক্ত ধরে গেল গেমসের প্রতি। ভাবতে লাগলাম কিভাবে মোবাইলটাকে আরো সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার করা যায়। তো ঐ সময়টাতেই একদিন এক বন্ধু এসে হাজির। সে অবশ্য আমার আগেই মোবাইল কিনেছিল। বলে রাখা ভাল, ঐ সময় মোবাইলই ছিল আড্ডার একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। কে কোন সেট কিনল, কে কোন কোম্পানীর সিম ব্যবহার করছে, কোন কোম্পানীর কলরেট কেমন, নেটওয়ার্ক কেমন এসব নিয়েই তর্ক-বিতর্ক।

তো সেদিন আড্ডার এক ফাকে বন্ধু ফিসফিস করে বলল, দোস্ত মাইয়ার নাম্বার লাগবো নাকি? আমি অবাক হয়ে বললাম, কোন মেয়ের নাম্বার? সে আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল, “আরে ব্যাটা আবুল, একটু স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা কর। বাচ্চাগোর মত মোবাইলে খেলছ গেমস। মোবাইলে যে কত কিছু করার আছে এই সম্পর্কে তোর কোনো ধারনা আছে ব্যাটা?” একথা বলেই সে তার মোবাইলের নাম্বার লিস্টটা আমাকে দেখাতে লাগল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় শ’খানেক মেয়ের নাম্বার তার সেটে সেভ করা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, দোস্ত এত মেয়ের নাম্বার দিয়া তুই কি করছ? সে আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল, “ঘ্যানঘ্যান করিছ না। নাম্বার লাগ্লে বল।“ আমি বললাম, মেয়ের নাম্বার দিয়া আমি কি করমু? তাছাড়া এদের কাউকে তো আমি চিনি না! আমার বন্ধু বিরক্তির স্বরে বলল, আরে ব্যাটা মাইয়া পটাবি। তাগোর লগে বন্ধুত্ব করবি। ডেটিং করবি। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, দোস্ত অপরিচিত একটা মেয়ে কি আমার সাথে কথা বলব? বন্ধু ঝাড়ি দিয়ে বলল, কেনরে ব্যাটা চুলকানি খালি পোলাগোই আছে, মাইয়াগো নাই?


যাই হোক ওর কাছ থেকে তিনটা মেয়ের নাম্বার নিলাম। ও শুধু তিনটা মেয়ের নাম বলতে পারল। আর কোনো তথ্যই নাকি তার জানা নাই। বন্ধু যখন চলে যাচ্ছিল আমি তাকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কয়টা পটাইলা দোস্ত? সে কোনো জবাব না দিয়েই চলে গেল।


সেদিন রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটা মেয়ের নাম্বারে এসএমএস করলাম-বন্ধুত্ত করতে চাই এসব হাবিজাবি লিখে। কোনো সাড়া পেলাম না। তারপর অন্য একটা মেয়ের নাম্বারে পাঠালাম তাতেও কোন সাড়া নেই। এভাবে সারারাত তিনটা মেয়ের নাম্বারেই এসএমএস মিসকল দিতেই লাগ্লাম। কোনো লাভ হল না। ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঘুমিয়েই পড়লাম।


সকালবেলা মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল। চোখ ডলতে ডলতে দেখি, তিন মেয়ের এক মেয়ে ফোন দিয়েছে। আমার খুশী আর দেখে কে!! মুখটা হাসি হাসি করে বললাম, হ্যালো!! ঐ হ্যালোই আমার শেষ কথা। মেয়েটা ফোন করে যে আমাকে কি ভাষায় গালিগালাজ করল সেটা জনসমুক্ষে বলতে পারবনা। তবে মেয়েদের মুখ যে এতটা খারাপ হতে পারে আমার ধারনাই ছিলনা। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল।


যাই হোক নাস্তা টাস্তা খাওয়ার পর দেখলাম আন-নন নাম্বার থেকে একটা কল এসেছে। রিসিভ করে একটা ছেলের কন্ঠ শুনতে পেলাম। ছেলেটা আমাকে আমার নাম, ঠিকানা, কোথায় পড়ি-এসব জিজ্ঞেস করা শুরু করল। আমি যখন তার পরিচয় জানতে চাইলাম...সে বলল, “আমি তোর বাপ। আর যাকে মিসকল দিয়ে জ্বালাইছস সে তোর মা।“ এরপরই ম্যারাথন গালি শুরু করে দিল। আমি এক সময় আর সহ্য করতে না পেরে কলটা কেটেই দিলাম।


মনটা সেদিন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছিল। এরকম ছ্যাব্লামী আচরনের জন্য নিজেকে নিজেই কিছুক্ষন গালাগালি করলাম। তারপর মনে মনে ঠিক করলাম আর কোনোদিন কোন অপরিচিত মেয়েকে এভাবে ডিসটার্ব করবনা।


সেদিন বিকেলেই কিছু বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই তিন মেয়ের কোন এক মেয়ের নাম্বার থেকে ফোন। প্রথমে ধরলামই না। তারপর দেখি আবার কল দিছে। এবার ভয়ে ভয়ে ধরেই ফেললাম। আপ্নারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা...মেয়েটা যখন হ্যালো বলল সেই “হ্যালো” শুনেই আমি মোটামুটি কাইত। এত সুন্দর কন্ঠ আমি সেদিনই প্রথম শুনেছিলাম। মেয়েটি বলল, “আচ্ছা আপনাদের ছেলেদের কি মেয়েদের ডিসটার্ব করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?আপ্নাদের জ্বালায় তো মোবাইল ফোন আর ব্যবহারই করা যাবেনা মনে হচ্ছে।“ আমি খুব নরম স্বরে বললাম, “আমি আসলে খুব দুঃখিত। আমি কথা দিলাম আপনাকে আর কখনো ডিসটার্ব করবনা।“ আমার কথা শুনে মেয়েটার কি হল কে জানে?? সে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। একসময় হাসিয়ে থামিয়ে বলল, “আমি বোকা লোক খুব পছন্দ করি। আপনি মাঝে মাঝে ডিসটার্ব করলে আমি খুব একটা মাইন্ড করবনা।“


সেই থেকে শুরু। আমার চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারনা সব কিছুই তখন ঐ মেয়েকে ঘিরে। সারাদিন যে কত কথা বলতাম তার কোনো হিসাব নিকাশ ছিলনা। ঐ সময় মোবাইল কল চার্জও ছিল অনেক বেশী। টাকাও যাচ্ছিল পানির মত। সে নিয়ে মাথা ব্যাথাও ছিলনা। একসময় মনে হল মেয়েটার প্রেমেই পড়ে গেছি। মেয়েটাও যে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল বুঝতে পারতাম। অথচ মজার ব্যাপার হল মেয়েটার সাথে আমার তখনও দেখা হয়নি। একটা সময় মনে হল এই মেয়ে ছাড়া আমার চলবেই না। মনে মনে ঠিক করলাম যেদিন দেখা করব, সেদিনই ওকে প্রপোজ করব যা থাকে কপালে।


একদিন দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যদিও অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম তবে মেয়েটার টাল-বাহানার কারনে অনেক পরেই ডেইট ফিক্সড হল। ওকে বলেছিলাম, একটা শপিং মলের নিচে ওয়েট করতে। আমারই সেখানে আগে পৌছানোর কথা ছিল কিন্তু যানযটের কারনে দেরী হয়ে গিয়েছিল। ওর একটা নীল সেলোয়ার কামিজ পরে আসার কথা। শপিং মলের খুব কাছাকাছি যখন এসে পড়লাম, নীল সেলোয়ার কামিজ পরা একটা মেয়ে আমার চোখে পড়ল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এই মেয়েই সেই মেয়ে। একটু দূরে সরে এসে ফোন করে সিউর হলাম যে এই সে মেয়ে যাকে আমি আজকে প্রপোজ করব বলে ঠিক করেছি। হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছিল। কি করব কিছু ভাবতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আকাশটা আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। পাশের একটা দোকানে গিয়ে সিগারেট ধরালাম। মেয়েটাকে একটা ফোন দিয়ে বললাম, “হঠাত করে একটা ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আজকে দেখা হচ্ছেনা। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।“ জবাবে ও শুধু একটা কথাই বলেছিল, “ইটস ওকে”

ভালোবাসা কারে কয়?

সেই কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে নীলা। অর্কের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ সারাটা দিনই রান্নাবান্না করেই কাটিয়েছে সে। নীলার প্ল্যান ছিল অর্কের প্রিয় ডিসগুলো রান্না করে অর্ককে একটু চমকে দিবে আজ। নাহ নাহ আরেকটা কারনও আছে। নিজের জন্মদিনে পরিবারের সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করা ছোটবেলা থেকেই নীলার একটা শখ। আজ নীলার জন্মদিন। ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে অথচ অর্কের তখনো পাত্তা নেই। অর্কের উপর অবশ্য কখনো রাগ হয়না নীলা। হতে পারেও না। তাছাড়া নীলা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং ম্যাচিউর একটা মেয়ে। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মান-অভিমান, ঝগড়া-জাটি নীলার খুবই অপছন্দ। অর্ক একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকুরী করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে কাজের উপরই থাকতে হয়। আজ যে নীলার জন্মদিন তা হয়ত অর্কের মনেও নেই। মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কাজের চাপে অনেক সময় নিজের নাম ও ভুলে যায় সে। নীলার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় অর্ককে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসে। কিন্তু সেই সময় বা সুযোগ অর্কের কখনো হয়না। এই নিয়ে অবশ্য তেমন একটা আক্ষেপও নেই নীলার। সপ্তাহে যে একটা দিন অর্কের ছুটি থাকে সেই দিনটাতেই ভালোমত পুষিয়ে নেয় সে। মেয়ে হিসেবে অতি মাত্রার রোমান্টিক নীলা। নীলার অদ্ভুত-মিষ্টি-পাগলামীগুলো দারুন উপভোগ করে অর্ক। যদিও অর্ক পুরোপুরিই নীলার বিপরীত। নীলার মত পাগলামী অর্ক কখনোই করতে পারেনা। তাছাড়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ সবাই একভাবে ঘটাতে পারেনা। সবচেয়ে বড় কথা, নীলা অর্কের মাঝে অসাধারন একটা বোঝাপড়া ছিল। তাদের ভালোবাসার ভিত্তি ছিল অত্যন্ত মজবুত।

কলিংবেল বাজছে অনেকক্ষন থেকে। অর্কের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে নীলা টেরও পায়নি। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলল সে। আট-দশটা দিনের মত অতি স্বাভাবিকভাবেই গৃহে প্রবেশ করল অর্ক। হাতমুখ ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করল। নীলাও প্রতিদিনের মত অর্কের জন্য খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অর্ক যখন ড্রয়িংরুমে বসে অতি মনোযোগ সহকারে খবর দেখছিল, নীলা হুট করে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিল। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, “আসেন মশাই এবার খেতে আসেন”। অর্ক অবাক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রইল। নীলাকে সাজলে যেন একটু বেশীই সুন্দর লাগে।

--আজকে হঠাত এত সাজুগুজু করলা, কাহিনী কি?

--ইচ্ছা করল তাই সাজলাম। কেন আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?

--নাহ খুব একটা খারাপ লাগছে না। মুচকি হেসে বলল অর্ক।

অর্ক যদি এখন বলত, “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নীলা। তুমি কি জানো নীল শাড়ীতে তোমাকে কতটা মানায়?” তাহলেই হয়ত নীলা অবাক হত।

--ওমা আজকে তো দেখি আমার সব প্রিয় খাবারগুলা রান্না করেছ। দাড়াও একটু একটু করে টেস্ট করি। হুম সেইরকম হইছে কোরমাটা। তোমার রান্নার হাত আসলেই আমার মায়ের মত!!

খাবার দাবার শেষ করে ওরা দুজন গল্প করছিল। হঠাত করেই অর্ক নীলাকে বলল চোখ বন্ধ করতে। নীলার মাথায় কোনভাবেই কাজ করছেনা কেন হঠাত করে অর্ক এই আবদার করছে। নীলা তেমন একটা গেজালো না। চোখ বন্ধ করে ফেলল।

--এবার চোখ খোল।

চোখ খুলে তো নীলার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অর্ক নীলার আঙ্গুলে খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দিল।

--ওহ মাই গড! হাউ বিওটিফুল! নীলার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।

--হেপী বার্থডে জান! তুমি কি ভাবছিলা আমি ভুলে গেছি?

খুশীতে নীলার চোখে পানি এসে পড়ল। গিফট পেয়ে নীলার যতটা না খুশী লেগেছে তার চেয়ে লাখ লাখ গুন বেশী খুশী লেগেছে এই ভেবে যে অর্ক তার বার্থডে’র কথা মনে রেখেছে।

--শয়তান...এত ঢং কর কেন তুমি? এই বলে নীলা হাসতে হাসতে অর্ককে কয়েকটা ঘুষি দিল।

--এবার তোমার চোখ বন্ধ করার পালা। চোখ বন্ধ কর বলছি!

--কেন আমাকে কি কোনো গিফট দিবা নাকি?

--আগে চোখ বন্ধ কর তো। কোনো কথা নাই!

চোখ বন্ধ করতেই নীলা অর্ক জড়িয়ে ধরে নিবিড়ভাবে কিছুক্ষন কিস করল। অর্কও ওকে জাপটে ধরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল। ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে ওরা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকল।

(নীলার বর্ণনা হয়ত এই গল্পে আর আসবেনা। মজার ব্যাপার হল নীলা এই গল্পের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন চরিত্র না)

অফিসে একজন তুখোড় এক্সিকিউটিভ হিসেবে অর্কের বেশ সুনাম রয়েছে। প্রচন্ড মেধা, কাজের প্রতি একাগ্রতা এবং আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্বের কারনে বসের সবচেয়ে আস্থাভাজন ইম্পলয়ী অর্ক। আর তাইতো বস তার একমাত্র মেয়ে সিমিনের সাথে সবার প্রথমে অর্ককেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সিমিন কয়দিন আগেই হার্ভাড থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরেছে। দু-একদিনের মধ্যেই কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে সে। অত্যন্ত আকর্ষনীয় মুখশ্রী এবং শারিরিক অবয়বের অধিকারী সিমিন। সিমিনের মায়াবী চেহারার ফাঁদে পড়ে যেকোনো পু্রুষই কুপোকাত হতে বাধ্য। তবে সিমিন অবাক হল তার প্রতি অর্কের নির্লিপ্ততা দেখে। অর্কের ব্যাক্তিত্ব কেন যেন প্রচন্ডভাবে আকর্ষন করল সিমিনকে। সিমিন কখনো কোন পুরুষকে দেখে এতটা আকর্ষন অনুভব করেনি। কত পুরুষই তো পাগল ছিল সিমিনের জন্য! কিন্তু আজ সিমিনের কেন যেন মনে হচ্ছে অর্কই সে সপ্নপুরুষ যাকে সে এতটা দিন ধরে খুজে বেড়িয়েছে।

প্রথম পরিচয়ের পর থাকেই অর্কের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে সিমিনের। অর্কের সাথে একটু কথা বলার জন্য একটু কাছ থেকে দেখার জন্য খুব দ্রুতই ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ফেলল। দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই একদিন অর্ককে তার রুমে ডেকে আনলো সিমিন।

--আসুন মিঃ অর্ক। কেমন আছেন আপনি?

--জ্বী ম্যাডাম ভালো। আপনি ভালো আছেন? আর অফিস কেমন লাগছে?

--একটু নারভাস। মনে হচ্ছে বেশ কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছি। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।

--আস্তে আস্তে সবকিছুই বুঝে উঠবেন ম্যাডাম।

--হুম। তবে আপনার হেল্প আমার দরকার। ডেডের কাছে আপনার অনেক প্রসংশা শুনেছি। আমার মনে হয় একমাত্র আপনিই আমাকে এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী হেল্প করতে পারবেন। আপনি কি আমাকে হেল্প করবেন প্লিজ?

--হা হা হা! অবশ্যই ম্যাডাম। আমি আমার সাধ্যমত আপনাকে হেল্প করার চেষ্টা করব। তাছাড়া এটা তো আমার জন্য বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার!

--থ্যাংক্স এ লট অর্ক সাহেব। ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড আমরা কি আজ একসাথে লাঞ্চ করতে পারি?

এই প্রস্তাবে অর্ক কিছুটা অবাক হল। তবে সাথে সাথেই তার সম্মত্তির কথা জানিয়ে দিল।

সেদিন লাঞ্চের সময় অনেক কথা হল সিমিন ও অর্কের মধ্যে। অর্ক খুবই প্রফেশনাল। কাজের কথার বাইরে কোনপ্রকার টূশব্দটিও করছে না সে। লাঞ্চের ফাকেই সিমিনকে তাদের কোম্পানীর স্ট্রাটেজী, পলিসি এবং ফিউচার একশন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা দিল অর্ক।

--অনেক ধন্যবাদ অর্ক সাহেব। অনেক কিছুই জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে। বাই দ্যা ওয়ে কাল তো উইকএন্ড। কালকে প্ল্যান কি আপনার?

--তেমন কিছু না। উইকএন্ডটা বউ-এর সাথে ঘোরাঘুরি করেই কাটিয়ে দেই। আপনার কি প্লান ম্যাডাম?

সিমিন কেমন যেন অনুভুতিহীন হয়ে গেল অর্কের কথা শুনে। প্রচন্ড শক খেলে হয়ত মানুষ অনুভুতিশুন্য হয়ে পড়ে। সিমিন মনে মনে ভাবতে লাগল একটা বারের জন্যও কেন তার মনে হল না যে অর্ক বিবাহিত হতে পারে! অর্ককে পাওয়ার তীব্র আখাঙ্কাই কি তাকে বাস্তব থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রেখেছিল?

--আর ইউ আপসেট ম্যাডাম?

--নাহ আই এম ওকে। আসলে উইকএন্ড আমার কাছে স্পেশাল কিছু না। তবে আপনার উইকএন্ড প্ল্যান শুনে ভালোই লাগল। বেস্ট অব লাক!

এর পর প্রায় মাসচারেক সময় পার হয়ে গেছে। সিমিন পুরোপুরি প্রফেশনাল হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে । বেশ দক্ষতার সাথেই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অর্কের সাথে তার সম্পর্কের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি সবকিছু আগের মতই আছে। এই জীবনে কোন কিছুই তাকে কোনোদিন চাইতে হয়নি। কোটিপতি বাবার একমাত্র কন্যা সে। কোনো কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতে অভ্যস্ত। অথচ আজ যাকে মনেপ্রানে চাইছে, সে আগেই অন্য কারো হয়ে বসে আছে। এই অপ্রিয় সত্যটা কিছুতেই মানতে পারছেনা সিমিন। কেনো অর্কের সাথে তার আরো আগে দেখা হল না? কেনো!!! সিমিনের মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে অর্ককে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে। কিন্তু এর পরিনামের কথা চিন্তা করে শিয়রে উঠে সিমিন। অর্ক যদি তাকে অপমান করে বসে? অর্কের মনে যদি তার প্রতি তীব্র ঘৃনা জেগে উঠে? সিমিনকে যদি খুব বাজে চরিত্রের মেয়ে ভেবে বসে অর্ক? প্রশ্নগুলো প্রতিটি মুহুর্ত যন্ত্রনা দেয় সিমিনকে। অসহ্য মানসিক যন্ত্রনায় মাঝে মাঝে চিৎকার করে কেঁদে উঠে সিমিন। সে জানে, তার মনে যে কষ্ট; যে তীব্র যন্ত্রনা; তা কেউ বুঝবে না। বুঝতে চাইবেও না!!

সিমিনদের কোম্পানী বিশাল একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে। প্রজেক্টের লোকেশন চট্রগ্রাম। এই মুহুর্তে সাইট ভিজিট করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে । ওখানে নাকি ছোটখাটো একটা সমস্যও চলছে ইদানিং। অর্কের সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে খুব দরকার। সে ছাড়া এসব ঝামেলাগুলো এত স্মুথলি কেউ ম্যানেজ করতে পারবে বলে সিমিনের মনে হয়না।

--ম্যাডাম কি আমাকে ডেকেছিলেন?

--অর্ক সাহেব, প্লিজ বসুন। আমরা চিটাগং-এ যে নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছি ইমিডিয়েটলি ওখানটায় যাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। আর ওখানে যে ইদানিং কিছু সমস্যা চলছে তাতো আপনি আগেই জানেন। আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারছিনা।

--ম্যাডাম, আমার প্রতি আপনার ভরসা বোধ হয় একটু বেশীই! মুচকি হেসে রসিকতার সুরে বলল, অর্ক।

--হাহাহাহাহা! হুম ঠিকই বলছেন আপনি।

--আমার তাহলে কখন রওনা দিতে হবে?

--আগামীকাল সকাল সকাল হলে ভালো হয়।

--ম্যাডাম, ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড আমার একটা প্রস্তাব ছিল।

--দেখুন অর্ক সাহেব আমি কিন্তু আপনাকে বন্ধুর মতই মনে করি। আপনার কাছে আমি কখনোই এত ফর্মাল বিহেভ আশা করিনা। আর আমি আপনার যেকোনো প্রস্তাবে চোখ বন্ধ করে রাজী হয়ে যাবো, তবে এক শর্তে! আপনি প্লিজ আমাকে আর ম্যাডাম ম্যাডাম ডাকতে পারবেন না! বলুন রাজী??

অর্ক হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। অর্ককে এভাবে হাসতে সিমিন কখনো দেখেনি। অর্ক যে এত সুন্দর করে প্রান খুলে হাসতে পারে সিমিনের জানা ছিলনা।

--সরি একটু বেশীই হেসে ফেললাম বোধ হয়! বাই দ্যা ওয়ে ম্যাডাম, শত হলেও আপনি কিন্তু আমার বস।

--নো আমি আপনার বস না। আমি আপনার বন্ধু। এখন থেকে আপনি আমাকে সিমিন বলে ডাকবেন। ওকে??

--জো হুকুম ম্যাডাম!

--আবার ম্যাডাম!! দিজ টাইম আই এম রিয়েলী গেটিং এংরি, অর্ক! মৃদু হেসে বলল সিমিন।

--অল রাইট মিস সিমিন! ইউ আর নট মাই বস এনিমোর! হেপী?

--থ্যাক্স এ লট অর্ক! এবার আপনার প্রস্তাবটা শুনতে চাই। যদিও আমার উত্তর পজিটিভই হবে।

--মিস সিমিন, আমি চাই আপনিও আমার সাথে চলুন চিটাগং। চিটাগং খুব সুন্দর একটা শহর। প্রজেক্টের কাজের ফাঁকে আমি আপনাকে শহরটা ঘুরিয়ে দেখাবো। আপনার ভালো লাগবে। তাছাড়া আপনি তো জানেন এই প্রজেক্ট আমাদের কোম্পানীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সাথে থাকলে আপনার সাথে ডিসকাস করে অনেক প্রব্লেম ইজিলি সল্ভ করতে পারতাম!

অর্কের কথাগুলো সিমিনের কাছে সপ্নের মত মনে হচ্ছিল। অর্ক কি কথাগুলো আদৌ বলেছে? আচ্ছা অর্ক কি সত্যিই তাকে চিটাগং শহর ঘুরিয়ে দেখাতে চায়?

--মিস সিমিন আপনি কি যাচ্ছেন আমার সাথে? অবশ্য আপনার পারসোনাল প্রব্লেম থাকলে আমি কখনোই ইনসিস্ট করবনা।

--আপনি কি আমাকে পাগল ভেবেছেন? এত সুন্দর একটা প্রস্তাবে আমি কিভাবে অরাজী হই? এন্ড ইউ নো অর্ক, আমি একদম ছোটবেলায় আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম। ওখানেই আমার বেড়ে উঠা। দেশে খুব কম আসা হত আর আসলেও অল্প কদিনের জন্য। বাংলাদেশের বেশীরভাগ জায়গা এখনো আমার ঘোরা হয়নি। এই প্রজেক্টের বাহানায় চিটাগং শহরটা একটু ঘুরে দেখা হবে। আমি কিন্তু দারুন এক্সাইটেড!

--থ্যাঙ্ক ইউ মিস সিমিন। ইটস মাই প্লেজার টু হেভ ইউ ইন দি জার্নি। তাহলে আমরা কাল সকালে রওনা হচ্ছি।

অর্ককে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে সিমিন। কাজের প্রতি অর্কের সিনসিয়ারিটি, রেসপন্সিবিলিটি, ডেডিকেশন অ্যান্ড পেশন চোখে পড়ার মত।

--কাজ করতে করতে তো বোধ হয় আমাকে চিটাগং ঘুরিয়ে দেখানোর কথা ভুলেই গিয়েছেন, অর্ক।

--আমি আসলেই ভাবতে পারিনি কাজের মধ্যে এতটা সময় ব্যয় হয়ে যাবে। আমাদের তো প্রায় ফেরার সময় হয়ে গেল।

--কিন্তু আমি প্রচন্ড টায়ার্ড অর্ক। এই মুহুর্তে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার এনার্জি আমার একেবারেই নেই। কেন ইউ কান্ডলি বুক মি এ হোটেল রুম প্লিজ? আর আপনি ঢাকা চলে যান। আমি আজকের রাতটা হোটেলে কাটিয়ে কালকে ঢাকা ব্যাক করব।

--হুম বুঝলাম। আপনি আসলে আমাকে আপনার বন্ধু ভাবেন না। বন্ধু ভাবলে এভাবে অন্তত বলতে পারতেন না। আর আপনাকে এখানে একা রেখে আমার পক্ষে ঢাকা ব্যাক করা সম্ভব না।

--অহ মাই গড...আই ওয়াজ জাস্ট থিংকিং এবাউট ইউ। এবাউট ইউর ফ্যামিলি। আমার জন্য আপনাকে খামাখা ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছিলাম না অর্ক।

--ইউ ডোন্ট হ্যাভ টূ অরি এবাউট ইট। আই উইল ম্যানেজ মাই ওয়াইফ। ইউ নো সি ইজ কোয়াইট সুইট এন্ড আন্ডারস্ট্যানডেবল গার্ল। তাছাড়া আমাকে অফিসের কাজে তো প্রায়ই ঢাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরেও থাকতে হয়। নীলা একা থেকে অভ্যস্ত। আমার পরিচিত খুব ভালো একটা হোটেল আছে এখানে। আমি ওখানে ফোন করে দুটা রুম বুক করে রাখছি।

“সো হার নেইম ইজ নীলা, রাইট? সাচ এ লাকি গার্ল”! কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছে সিমিন। ভাগ্যিস অর্ক সেভাবে খেয়াল করেনি!

--হোটেল তো বুক হয়ে গেল। চলুন হোটেলে যাই। আপনার বিশ্রাম দরকার। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে।

--আমার এখনই হোটেলে যেতে ইচ্ছা করছেনা অর্ক। আসুন না কোথাও বসে কিছুক্ষন গল্প করি।

--তাহলে তো খুবই ভালো হয়। আপনার সাথে এখন পর্যন্ত তো কাজের বাইরে তেমন কোনো কথাই বলা হয়নি। এই সুযোগে আপনার সাথে জমিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়া যাবে।

--হুম আমার ও খুব ভালো লাগবে আপনার সাথে আড্ডা দিতে। ইউ নো ওয়ান থিং অর্ক...আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আড্ডাই দিতে পারেন না।

--হাহাহাহাহা। আপনি বোধ হয় আমাকে একটু বেশিই বোরিং ভাবেন, তাই না?

অনেকক্ষন ধরে আড্ডা চলছে ওদের মধ্যে। সিমিন তার প্রবাস জীবনের কিছু মজার ও তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করল অর্কের সাথে। এদিকে অর্কও নীলার সাথে তার প্রথম পরিচয়, প্রেম অতঃপর বিয়ের ঘটনা গুলো শেয়ার করল।

--নীলাকে খুব খুব ভালোবাসেন, তাই না অর্ক?

--হ্যা অনেক ভালোবাসি। তবে আমার মনে হয় নীলা আমাকে তার চেয়েও কয়েকশগুন বেশী ভালোবাসে।

অর্ক যখন হেসে হেসে এসব কথা বলছিল, প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল সিমিনের। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বুক ফাটিয়ে কিছুক্ষন কাঁদতে। নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রন করল সিমিন। ভালোবাসা মানুষকে এত কষ্ট দেয় কেন?

--আপনার কথাও কিছু বলেন সিমিন। আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?

অর্কের কথা শুনে প্রথমে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সিমিন। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। আসলে কি-ই বা বলবে সে? উত্তরে শুধুই একটা মুচকি হাসি দিল।

--মিস সিমিন আপনি কি জানেন আপনি কতটা সুন্দর? আপনার মত রুপবতী নারী আমি আমার জীবনে দেখিনি। আপনি শুধু দেখতেই সুন্দর না...আপনার মত এত অমায়িক, এত ভদ্র, এত মিষ্টি যে কোনো মেয়ে হতে পারে আমার জানা ছিল না। আপনি যাকে ভালোবাসবেন নিঃসন্দেহে সে হবে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান পুরুষ।

-- একটা কথা জানেন মিঃ অর্ক, আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না আমি কতটা দুঃখী...কতটা অভাগী একটা মেয়ে!

--এভাবে বলছেন কেন সিমিন? আপনার কেন এত দুঃখ?

--আপনাকে বলতে পারবনা অর্ক। বললে আপনি আমাকে খুব খারাপ ভাববেন। ঘৃনা করবেন আমাকে।

--আমি আপনাকে ঘৃনা করবনা। কোনো মানুষের পক্ষে আপনাকে ঘৃনা করা সম্ভব না। আমাকে আপনার দুঃখের কথা খুলে বলুন সিমিন। দেখবেন আপনার অনেক হাল্কা লাগবে।

--মিঃ অর্ক আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন। কথাটা বলার পর নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারল না সিমিন। চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

অর্ক পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল সে একটা গাছ হয়ে গেছে। সিমিন মেয়েটা পাগলের মত কাঁদছে অথচ একটা বারের মত সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু মনে মনে বলল, হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমাকে এতটা অক্ষম করে কেন পাঠালে?


সিমিনকে হোটেলে নিয়ে এল অর্ক। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক সে। ভিতরে জমে থাকা তীব্র যন্ত্রনা প্রতিটি মূহুর্তে মৃত্যর স্বাদ দিচ্ছিল সিমিনকে। এখন নিজেকে অনেকটাই হাল্কা লাগছে ওর।

--আমি আপনার পাশের রুমেই আছি সিমিন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে নক করবেন।

--আপনি কি আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবেন অর্ক?

--আপনি তো কোনো অপরাধ করেননি সিমিন। কেনো ক্ষমা চাচ্ছেন?

--আমি তো মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছি অর্ক। আপনাকে ভালোবাসার কোনো অধিকার আমার নেই তারপরও আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

--ভালোবাসা তো কোনো অপরাধ নয় সিমিন। মানুষ তো জেনে বুঝে, হিসেব নিকেশ করে ভালোবাসতে পারেনা। ভালোবাসা হয়ে যায়। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। আপনার ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যদি থাকত, আমি আপনাকে এত বেশী ভালোবাসতাম যে আপনি কোনোদিন ভালোবাসার একবিন্দু অভাব অনুভব করতেন না। কিন্তু আমি নিরুপায়।

অর্কের কাছে এত সুন্দর উত্তর সপ্নেও আশা করেনি সিমিন। অর্ক এত ভালো কেনো? সিমিনের খুব ইচ্ছে করে যদি একটি রাত...একটি মাত্র রাত অর্ককে তার বুকে জড়িয়ে রাখতে পারত!

--অর্ক আমি শেষবারের মত আপনার কাছে একটা জিনিস চাইব। কথা দিলাম এই জীবনে আর কোনোদিন আপনার কাছে কোনো আবদার করব না। দেবেন আমাকে?

--আমাকে প্লিজ আর ছোট করবেন না সিমিন। বলুন কি চান আপনি?

--আমাকে কি একটি বারের মত আপনার হাতটা ছুঁয়ে দেখতে দেবেন?

অর্ক সিমিনের পাশে বসে একটা হাত ওর কোলে রাখলো। সিমিনের প্রতি অদ্ভুত একটা আকর্ষন অনুভব করছে অর্ক। অত্যন্ত ভয়াবহ সে আকর্ষন। প্রচন্ড আবেগে সিমিনকে বুকে জড়িয়ে নিল অর্ক। সিমিনও অর্ককে বুকে জড়িয়ে গভীর ভাবে চুমু খেতে লাগল। অর্ককে বুকে পেয়ে সিমিনের মনে হচ্ছিল যেন সে স্বর্গ পেয়ে গেছে! কিন্তু অর্কের বুকে তো সারাজীবনের জন্য আশ্রয় পাবেনা সিমিন! কিভাবে বাচবে সে অর্ককে ছাড়া??

--তুমি কেন আমার জীবনে আরো আগে আসলে না অর্ক? কেনো এতটা কাছে পেয়েও তোমাকে আমার আজ হারাতে হবে? কেনো??

অর্ক কোনো জবাব দিতে পারেনা। কি জবাব দিবে সে? এই প্রশ্নের কি কোনো জবাব আছে আসলে? প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল অর্কের। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সিমিনকে দেখতে পেলনা অর্ক। পাগলের মত এদিক সেদিক খোজাখোজি করতে লাগল। কোথায় গেল সিমিন? প্রচন্ড অস্থির লাগছিল অর্কের। সিমিনের মোবাইলে ফোন করেও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা থেকে যে গাড়ীটি তারা নিয়ে এসেছিল সেটিও উধাও। হোটেলের ম্যানেজারকে ব্যাপারটা খুলে বলার পর সে জানালো যে, সিমিন একদম ভোরের দিকে গাড়ী নিয়ে একাই বেড়িয়ে গেছে। অস্থিরতা ভয়ংকরভাবে গ্রাস করল অর্ককে। হাত পা কাঁপতে লাগল। অর্কের সিক্সথ সেন্স প্রচন্ড সার্প। তার কেবলই মনে হচ্ছিল ভয়াবহ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। হঠাত শার্টের বুক পকেটে চিরকুটের মত কিছু একটা দেখতে পেল। নিশ্চিত হল যে সেটা সিমিনের চিরকুট।

চিরকুট লেখা ছিলঃ “অর্ক, তোমাকে ছাড়া আমার এই জীবন প্রচন্ড অর্থহীন মনে হচ্ছে। তোমাকে ছাড়া আর একটি মুহুর্তও আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আজকে টিভিতে আমার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখাবে। তুমি প্লিজ আজকে কোনো খবর দেখো না! আমার ক্ষত বিক্ষত শরীরটা দেখলে তোমার খুব কষ্ট লাগবে জানি। আর নীলা খুব ভালো মেয়ে। তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর মনে কোনোদিন কষ্ট দিও না। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। এই জীবনে তোমাকে পেলাম না...তাতে কি! এরপর প্রতিটি জীবনে তুমি আমারই হবা...শুধু আমারই”!!

মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

"আমার মনে হয় এই দুনিয়ার সব মেয়েই খারাপ"

আমার বাসা কল্যানপুর না হলেও এই এলাকাটা আমার কাছে খুবই প্রিয়। আমার কিছু বাল্য বন্ধু কল্যানপুর থাকে স্থায়ীভাবে তাই প্রায় প্রতিদিনই ওখানে যেতাম আড্ডা দিতে। এখন অবশ্য নানা ব্যস্ততার কারনে খুব একটা যাওয়া হয়না। যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের আড্ডার স্পট ছিল রিফাতের বাসার ছাদ। প্রতিদিন বিকেলেই তুমুল একটা আড্ডা হত ওদের বাসার ছাদে। আপনাদের হয়ত মনে হতে পারে এত জায়গা থাকতে ছাদ কেন? আসলে রিফাতদের আশেপাশের বিল্ডিংগুলাতে অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ছিল। বিকেলে ওরাও নিজ নিজ বাসার ছাদে উঠত। আমরা আড্ডার পাশাপাশি একটু আধটু টাঙ্কিও মারতাম আর কি!!;);)

ছাদে যেসব সুন্দরীরা উঠত বেশিরভাগই ছিল আমাদের সমবয়সী। এই ধরেন নাইন/টেন-এ পড়ে এমন আরকি! তো বলে রাখা ভালো, আমাদের কিন্তু আবার টাঙ্কি পার্টনার নির্ধারিত ছিল। নিজের টাঙ্কি পার্টনার ছাড়া অন্য কারো পার্টনারের দিকে তাকালে গণধোলাইয়ের ব্যবস্থা ছিল। মাঝে মাঝে অবশ্য সমঝোতার ভিত্তিতে পার্টনার চেঞ্জ করারও বিধান ছিল। আসলে আমরা চেয়েছিলাম আমাদের টাঙ্কিবাজীর মধ্যে যাতে একটা সুশৃংখলতা বজায় থাকে। তাই এত বিধান সিধান!!
;):D

আমাদের সবার মধ্যে একমাত্র তুর্য ছিল ব্যাতীক্রম। সে টাঙ্কি মারত খুবই সুইট পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে। এতই পিচ্চি যে ঐ মেয়ের টাঙ্কি কি জিনিস সেটা বোঝার বয়সও তখন হয়নি। তুর্য একটা কথা সবসময় আমাদের বলত, “এইটা বড় হইলে একটা মাল হইবরে দোস্ত। দেখিস এই মাইয়া বড় হইলে আমি ওর লগেই প্রেম করমু”। তুর্যকে নিয়ে কত হাসি-তামাশা যে আমরা করতাম তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাঝে মাঝে ওরে বেবী-টিজার আখ্যায়িত করে হেভী গণধোলাই দিতাম।
:)

মেয়েরা যে কত দ্রুত বড় হয়ে যায় লিন্ডাকে(সেই পিচ্চি মেয়ে) দেখেই তা ভালোমত বুঝতে পারলাম। সেদিনের পিচ্চি লিন্ডা মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কিভাবে এমন পরিপুর্ণ যুবতী হয়ে উঠল সেই হিসেবই আমরা মিলাতে পারছিলাম না। তুর্য ঠিকই অনুমান করেছিল, লিন্ডা সেইরকম একটা মাল হইছে। লিন্ডার শরীরের গঠন যে কতটা আকর্ষনীয় ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। তাছাড়া মেয়েটা এমন সেক্সি সেক্সি পোশাক পড়ে চলাফেরা করত যে শরীরের প্রতিটা ভাজই স্পষ্ট বোঝা যেত। যাই হোক লিন্ডা একসময় এলাকার সবচেয়ে হট গার্লের খেতাব পেয়ে গেল।


এদিকে আমাদের তুর্য মশাই কিন্তু কখনোই লিন্ডার পিছু ছাড়ে নাই। লিন্ডাকে পটানোর অনেক চেষ্টাই সে করে গেছে কিন্তু লিন্ডা তুর্যকে মোটেও পাত্তা দিতনা। হেন কোন অপমান নাই যে লিন্ডা তুর্যকে করতে বাকি রেখেছে। তারপরও তুর্য আশাহত হয়নি। তুর্যের বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন লিন্ডা তারই হবে।


এরমধ্যে আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধুদেরই একজন রকি, লিন্ডাদের বিল্ডিং-এ ফ্ল্যাট ভাড়া নিল। আগে থেকে চেনা পরিচিত এবং বর্তমানে প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে লিন্ডা ও রকির মধ্যে একটা বন্ধুত্তপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠল। এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ত অবশ্য তুর্য সহজভাবে নিতে পারেনি। তুর্যের আশংকা ছিল লিন্ডা-রকির সম্পর্ক ধীরে ধীরে প্রেমের দিকে টার্ন নিবে। আমরা কোনোকালেই তুর্যের কথা সিরিয়াসলি নিতাম না। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তুর্যের কথাই অবশেষে ফলে যেত।


রকি ও লিন্ডার একসময় প্রেম হল। কিন্তু অতি কাছের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও রকি এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে গোপন রেখেছিল। একদিন তুর্য সব বন্ধুর উপস্থিতিতে রকিকে চার্জ করল। তুর্য স্পষ্টভাবে রকির কাছে জানতে চাইল তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক চলছে। রকি প্রথম প্রথম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলেও একসময় সত্যি কথা স্বীকার করতে বাধ্য হল। তুর্য প্রচন্ড রেগে গিয়ে রকির কলার চেপে ধরে বলল, “তুই কি জানতি না আমি যে লিন্ডাকে পছন্দ করি”? রকি উল্টা তুর্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল, “তুই পছন্দ করিস বলে কি লিন্ডা তোর সম্পত্তি হয়ে গেল নাকি? লিন্ডা তো তোকে পছন্দ করেনা। লিন্ডা পছন্দ করে আমাকে। তুই একটা লুজার। যা ফুট!!!”


সেদিন পরিস্থিতি বেশ ভয়ংকর আকার ধারন করতে পারত। কিন্তু আমরা বাকি বন্ধুরা অতি কষ্টে ওদের দুজনকে সামাল দিয়েছিলাম। তুর্যকে আমি বুঝিয়ে বললাম, “দোস্ত, তুই তো কম চেষ্টা করিস নাই। অনেক অপমানিত হইছিস লিন্ডার কাছে। লিন্ডা আসলে তোর জন্য না। তুই ভুলে যা ওরে”। আমার কথা শুনে তুর্য কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর হুরমুর করে কেঁদে উঠল। ঐদিন তুর্যকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তুর্যের কান্না দেখে আমাদের চোখেও পানি এসে পড়েছিল।


এদিকে আমাদের রকি মশাই লিন্ডার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই বেশ বদলে গিয়েছিলেন। আড্ডার সময় সবাই উপস্থিত থাকলেও রকিকে খুজে পাওয়া যেত না। আর পাওয়া যাবেই বা কিভাবে? রকির ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা সবকিছুই তো লিন্ডা দখল করে বসে আছে। রকি পড়ত একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। ওদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিলনা। কিন্তু লিন্ডার মন রক্ষার জন্য সাধ্যমত প্রচুর টাকা খরচ করত। এই টাকা সে যোগাড় করত সেমিস্টারের ফি-এর টাকা মেরে। তাছাড়া না খেয়ে, পায়ে হেটে অতি কষ্টে সে টাকা জমাতো শুধুমাত্র লিন্ডাকে গিফট কিনে দেয়ার জন্য বা দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর জন্য।


একটা সময় লিন্ডা আর রকির সম্পর্ক লিন্ডার ফ্যামিলি জেনে ফেলে। লিন্ডার বাবা লিন্ডাকে বেশ মারধর করল এবং লিন্ডার একা বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেদাজ্ঞা জারি করল। রকির বাসায় গিয়েও রকির বাবা-মাকে নালিশ করেন এই ব্যাপারে।


এদিকে আমাদের ইউসুফ-জুলেখা আই মিন রকি-লিন্ডা ভিতরে ভিতরে প্ল্যান করে ফেলেছেন তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবেন। যথারীতি তারা ঘর থেকে পালালেন। ঢাকার একটা আবাসিক হোটেলে বাসর রাতও উদযাপন করে ফেললেন। বিয়ে কিন্তু তখনো হয়নি। বিয়ে হবে পরদিন সকালে। জানেনই তো, আজকালকার যুগে বিয়ের আগেই অনেকবার বাসর রাত উদযাপন করা হয়ে যায়।


একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। লিন্ডার বাবা আবার বেশ প্রভাবশালী এবং অত্যন্ত ধুর্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি পরদিন ভোরেই পুলিশের সহায়তায় দুই কোপত-কোপতীকে উদ্ধার করলেন হোটেল কক্ষ থেকে। রকিকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেন তার মেয়েকে কিডন্যাপিং-এর অভিযোগে। অবশ্য রকির বাবা-মা খুব শীঘ্রই রকিকে ছাড়িয়ে এনেছিল জেলহাজত থেকে।


রকি-লিন্ডার কাহিনী টক অব দ্যা এরিয়া হয়ে গেল। সবার মুখে মুখে তখন শুধু ওদেরই কথা। লিন্ডার বাবা লিন্ডাকে পুরোপুরি তালাবদ্ধ করলেন। এদিকে জেল খাইটা আইসা রকিও বেশ ডেস্পারেট হয়ে গেল। লিন্ডার বাবাকে ওপেন থ্রেট করল, “আপনি কতদিন লিন্ডাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন আমি দেখে নিব”।



চিঠিটা পড়ে রকি বাকশুন্য হয়ে পড়ল। আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। যেই তুর্যের আজকে খুশি হওয়ার কথা সেই তুর্য পর্যন্ত রকির এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মারাত্নক উত্তেজিত হয়ে পড়ল। আমরা ঠিক করলাম লিন্ডার বাসায় গিয়ে ওকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে রকির মুখোমুখি করব। তাছাড়া ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিত। কথা নাই বার্তা নাই সে কেনো রকিকে এভাবে অপমান করবে? কিন্তু রকি আমাদের বাধা দিয়ে বলল, “দোস্ত, ওর সাথে যা কথা বলার আমি বলব। তোদের কিছু করার দরকার নাই”। রকি অনেক চেষ্টা করছিল একটা বারের জন্য লিন্ডার সাথে কথা বলার কিন্তু লিন্ডা সেই সুযোগ রকিকে দেই নি।


এক সপ্তাহ পর সত্যি সত্যি লিন্ডার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের সম্পুর্ন আয়োজন অবশ্য অন্য একটি স্থানে সম্পন্ন হয়েছিল। যেই ছেলের সাথে লিন্ডার বিয়ে হয়েছে সেই ছেলে নাকি লিন্ডাদের আত্নীয়। লিন্ডা-রকির ঘটনাটা সে জানত এবং সবকিছু জেনেশুনেই বিয়ে করছে। লিন্ডা স্বামীর সাথে বেশ সুখেই আছে। মাঝে মাঝে স্বামী সমেত বাপের বাড়ী বেড়াতে আসে। স্বামীর সাথে ঢেলাঢেলী করতে করতে আর হাসতে হাসতে আমাদের সামনে দিয়ে যায়। আমরা তখন মনের দুঃখে গেয়ে উঠি, রকির বাড়ির সামনে দিয়া লিন্ডা যখন জামাই লইয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়, ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়। লিন্ডার বিয়ের পর থেকে রকি পুরোপুরি ঘরকুনো হয়ে গেছে। কখনোই আড্ডা দিতে আসে না। জোর করেও আনতে পারিনা। অথচ একসময় রকিকে ছাড়া আড্ডা জমতই না। আড্ডার প্রান ছিল রকি।


রকি এবং আমরা বাকি বন্ধুরা এখন পর্যন্ত একটা ব্যাপার সিওর হতে পারলাম না যে আসলে কেন লিন্ডা এরকম করল। “লিন্ডা কি আসলেই রকিকে ভালোবাসত? আর যদি ভালো নাই বেসে থাকে তাহলে কেন রকির সাথে পালিয়ে গিয়েছিল?রকির আর্থিক অবস্থা তো লিন্ডা আগে থেকেই জানত। সবকিছু জেনেশুনেই সে রকির সাথে রিলেশন করেছে। তারপরও কেন তাকে ফকির বলে গালাগালি করল? লিন্ডার বাবার কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না তো?” কারন নিশ্চয়ই কিছু একটা ছিল। হয়ত রকি বা আমরা কোনোদিন তা জানবনা।


কিছুদিন আগে রকির সাথে দেখা হইছিল। ওকে বললাম, “দোস্ত যা হইছে সব ভুইলা যা। আবার নতুন করে শুরু কর। নতুন কারো সাথে রিলেশন কর”। রকি অতি কষ্টে ঠোটের এক কোনায় হাসি এনে বলল, “দোস্ত আমি আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয় এই দুনিয়ার সব মেয়েই খারাপ”